মিয়ানমারে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরেছেন ৪৫ জন বাংলাদেশি। অন্যদিকে, সে দেশে সংঘাতের জেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ১৪৫ নাগরিককে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (৮ জুন) বিকেল ৫টায় দেশটির রাখাইন রাজ্যের সিতওয়ে থেকে একটি জাহাজে করে তারা বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
রোববার (৯ জুন) সকালে দেশে ফেরেন তারা। তাদের অধিকাংশই কক্সবাজার, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বাসিন্দা।
শনিবার (৮ জুন) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমারের উইংয়ের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাঈনুল কবির এ তথ্য জানান।
এর আগে, সকাল ৭টার দিকে জেটিঘাটে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে আনা হয়। টানা তিন ঘণ্টার বেশি সময় নানা প্রক্রিয়া শেষে ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর দুইটি টাগবোট বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিআইডব্লিটিএ ঘাট থেকে যাত্রা করে। সাগরে জলসীমার শূন্যরেখায় অবস্থানকারী মিয়ানমার নৌ-বাহিনীর জাহাজে তাদের তুলে দেওয়া হবে। সেখান থেকে জাহাজটি মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা দেবে।
বিজিবি ও প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে চারটি বাসযোগে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ-এর জেটিঘাটে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের কার্যাদি শুরু করা হয়। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশস্থ মিয়ানমারের দূতাবাসের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর মধ্যে মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা শেষে দেশে ফেরত আসতে ৪৫ বাংলাদেশি নাগরিককে একই স্থানে আনা হয়। সেখানেই চলে উভয় পক্ষের মধ্যে হস্তান্তর প্রক্রিয়া। পুরো কার্যক্রম শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েসহ প্রতিনিধি দলকে বিদায় জানায় উপস্থিত কর্মকর্তারা।
তবে এই প্রক্রিয়া নিয়ে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল বা বিজিবির কোনো কর্মকর্তাই গণমাধ্যমকে কিছু বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময় মিয়ানমারের বাহিনীর হাতে আটক শেষে কারাভোগ শেষ করা ৪৫ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। ফেরত আসাদের মধ্যে কক্সবাজার, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বাসিন্দা রয়েছেন। একইসঙ্গে মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এর আগে, দুই দফায় ২৫ এপ্রিল ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬১৮ জনকে ফেরত পাঠানো হয়। একই সঙ্গে গত ২৫ এপ্রিল মিয়ানমার থেকে কারাভোগ শেষে ফেরত আনা হয়েছে আরও ১৭৩ বাংলাদেশিকে।
গত ২৫ এপ্রিল মিয়ানমার থেকে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরেছেন ১৭৩ জন বাংলাদেশি। একইসঙ্গে ওইদিন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৮৮ জন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ। তারও আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ জন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, সেনা ও কাস্টমস কর্মকর্তাকে স্বদেশে ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ।
এদিকে কারাভোগ শেষে দেশে ফেরা ৪৫ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৪৫ জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রেখে যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম চলছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে ফেরত আসাদের মধ্যে কোনো অপরাধী বা মামলার আসামি রয়েছে কি-না তা দেখা হচ্ছে। আসামি থাকলে তাদের আইনি প্রক্রিয়া জন্য আদালতে পাঠানো হবে। না হয় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম