মিয়ানমারে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) এবং জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (ইএও) সারা দেশে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পগুলোতে হামলা চালিয়ে গত তিন দিনে ৬২ জন সৈন্যকে হত্যা করেছে। এসময় দখলে নিয়েছে বেশ কয়েকটি ঘাঁটি।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দেশটির সংবাদমাধ্যম ইরাবতী নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
দখল হওয়া ঘাঁটিগুলো মিয়ানমারের সাগাইং, ম্যাগউই, মান্দালয় জেলা এবং কাচীন ও কারেন প্রদেশ অবস্থিত। কতগুলো ঘাঁটি বিদ্রোহীরা দখলে নিয়েছে, এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জান্তাবিরোধী দুই সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী পিপল’স ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ) এবং এথনিক আর্মড অর্গানাইজেশন (ইআও) এই সংঘাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
জান্তার পক্ষ থেকে এখনও এ ইস্যুতে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি। তবে ইরাবতী জানিয়েছে, পিডিএফ এবং ইআও’র গণমাধ্যম শাখার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে এই সংবাদমাধ্যমটির।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাত থেকে কিছু এলাকা পুনর্দখল করতেও সক্ষম হয়েছিল জান্তা ও এবং জান্তা সমর্থক একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। কিন্তু গত তিন দিনে জান্তার পুনর্দখল করা এলাকাগুলো থেকে সেনা সদস্য ও জান্তাপন্থীদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিডিএফ ও ইআও’র নেতারা।
সবচেয়ে বেশি সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন মান্দালয় জেলার সান পিয়া এবং কারেন প্রদেশের থান্ডুয়াঙ্গি শহরে। পিডিএফ জানিয়েছে, এ দুই এলাকায় জান্তা-বিদ্রোহী সংঘাতে জান্তা-বিদ্রোহী সংঘাতে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ৪০ জন সেনা।
গত ডিসেম্বরের মাঝের দিকে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন প্রদেশের বেশিরভাগ শহরের দখল নেয় বিদ্রোহীরা। ওই সময় আরাকান আর্মি (এএ) জানায়, তারা রাখাইন রাজ্যের ১৭টি শহরের মধ্যে অন্তত ১৫টি এবং প্রতিবেশী চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহরের দখল সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করেছে। এই দুই রাজ্যে সেনাবাহিনীর ১৪২টি সামরিক চৌকির দখলও নিয়েছে তারা।
দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির রাজনৈতিক দল এনএলডি নির্বাচনে জয়ের পর ক্ষমতায় তাদের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর ঠিক আগে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। তারপর থেকেই দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়েছে দেশটির বেসামরিক জনগণ ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর। সম্প্রতি দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো জোট গড়ে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করেছে।
দেশটির কয়েকটি ফ্রন্টে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের হামলায় লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিদ্রোহীদের কাছে নিজেদের ঘাঁটি ও নিরাপত্তা চৌকির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা বাহিনী।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট নামের একটি জোট গঠন করে গত অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে হামলা শুরু করে। দেশটির উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলীয় চীন সীমান্ত লাগোয়া একাধিক শহর ও সামরিক নিরাপত্তা চৌকির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এই জোটের সদস্যরা।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম