মো:আমিন আহমেদ, সিলেট প্রতিনিধি: মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে নানা সমীকরণ চলছে। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা- সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আওয়ামী লীগে প্রার্থী তালিকা দীর্ঘ। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে লন্ডন থেকেও আসছেন প্রার্থীরা। মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও বসে নেই। সাবেক দুর্গ ফিরে পেতে জাতীয় পার্টি মহাজোটগতভাবে এ আসনে প্রার্থী চাইছে। ইতিমধ্যে মহাজোটের প্রার্থীরাও সরব রয়েছেন। এ কারণে আসন্ন সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে জটিল সমীকরণ চলছে।
এরইমধ্যে এ আসনে নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। প্রয়াত নেতার শোকসভা কেন্দ্র করেই চালানো হচ্ছে নিজেদের প্রচারণা। আর এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেন ভোটাররাও। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১১ই মার্চ মারা যান সিলেট-৩ আসনের পরপর তিন তিনবারের আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। তার মৃত্যুর পর গত বৃহস্পতিবার সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে এ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এখন সংসদ সচিবালয় থেকে চিঠি যাবে নির্বাচন কমিশনে। এরপর নির্বাচন কমিশন থেকে আনুষ্ঠানিক এ আসনে উপনির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করা হবে।
দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। এ আসনটি সিলেট নগরের কাছাকাছি এলাকায় গুরুত্ব অনেক বেশি। এ ছাড়া শিল্পনগরী ফেঞ্চুগঞ্জও রয়েছে এ আসনে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে দক্ষতার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। করোনাকালে মানবসেবার কারণে তিনি বিশেষ করে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছিলেন। এ কারণে তার মৃত্যুতে অপার শূন্যতা নেমে এসেছে এই আসনে। তার মৃত্যুর পর এখন এ আসনটিতে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি এ আসনে প্রার্থী চাইছে। কারণ- সিলেটের ছয়টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে সিলেট-৩ আসনটিকে জাতীয় পার্টি তাদের দুর্গ হিসেবে বিবেচনা করে। যার কারন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ছিলেন আব্দুল মুকিত খান। এ কারণে ইতিমধ্যে মহাজোটের প্রার্থী হতে চাইছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ আতিকুর রহমান আতিক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। জাতীয় পার্টির নেতাদের মুখে এখন পর্যন্ত এই দুই প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এ আসনে এক সময় জাতীয় পার্টির হয়ে ভোটের রাজনীতিতে সরব ছিলেন আতিকুর রহমান আতিক। পরবর্তীতে তিনি হবিগঞ্জের থিতু হয়েছিলেন। এখন আবার তিনি নিজ এলাকামুখী হয়েছেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন।
তবে সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের একাংশ চাইছে প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর পরিবার থেকে কাউকে প্রার্থী করতে। কারণ- পরিবারের কেউ প্রার্থী হলে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের রেখে যাওয়া অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হবে। এজন্য প্রথমেই তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন প্রয়াত এমপি’র স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী। তাকে প্রার্থী করলে আওয়ামী লীগের অনেকেই তাকে এ আসন ছাড় দিতেও প্রস্তুত বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। এ আসনে পরিবার থেকে প্রার্থী হতে চাইছেন যুক্তরাজ্যের চ্যানেল এস’র চেয়ারম্যান ও প্রয়াত এমপি’র ছোটো ভাই আহমদ উস সামাদ চৌধুরী। ভাইয়ের মৃত্যুর পর তিনি ২/১ দিনের মধ্যে সিলেটে আসছেন বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। তার ফিরে আসার পর মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পরবর্তী ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। এজন্য পরিবারের স্বজনরা আহমদ উস সামাদ চৌধুরীর পথ চেয়ে আছেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে দিন দিন প্রার্থী তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। সিলেট, লন্ডন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রায় এক ডজন নেতা ইতিমধ্যে এ আসনে প্রার্থী হতে প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন- যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএমএ’র কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেটের পরিচিত মুখ ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, ফেঞ্চুগঞ্জে নৌকার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন, সিলেট জেলা বারের পিপি এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ- সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তাহমিন আহমদ। এ ছাড়া- প্রার্থী হতে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসেছেন স্যার এনামুল ইসলাম ও দেশে আসার কথা রয়েছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা দেওয়ান গৌছ সুলতান। সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ- সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর নামও শোনা যাচ্ছে দলীয় নেতাদের মুখে মুখে।
ফেঞ্চুগঞ্জে নৌকার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন গতকাল বিকালে জানিয়েছেন- মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী জীবিত থাকার সময় অনেকেই তার সমালোচনা করেছিলেন সত্য। কিন্তু মৃত্যুর পর বুঝা গেছে তিনি দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে মানুষের উন্নয়নে মানুষের কাছাকাছি ছিলেন। এ কারণে এখন তার জন্য কাঁদছে সবাই। তিনি বলেন- প্রয়াত এমপি’র পরিবার থেকে তার স্ত্রীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হলে অনেকেই আগেভাগে প্রার্থী হওয়া থেকে সরে যাবেন। কারণ- এখানে আবেগ কাজ করবে। এদিকে- সিলেট-৩ আসনে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে সিলেট বিএনপি’র এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন- সিলেটের উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা সেটি দলীয় সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত হবে। দল সিদ্ধান্ত দিলে পরবর্তীতে আসবে প্রার্থীর কথা। এরপর প্রার্থী নিয়ে চিন্তা করা যাবে।