মালয়েশিয়া সরকারের লিগ্যালাইজেশনের সুযোগের পরও যেসব প্রতারিত বাংলাদেশী বৈধ হতে পারেনি, তাদেরকে আবারো বৈধ করে নেয়ার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি মাহাথির মোহাম্মদ সরকারের কাছে দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে পুলিশি ধরপাকড়ে দেশটির ১৩টি ডিটেনশন ক্যাম্প প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাইকমিশন-সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, অবৈধভাবে অবস্থান করা বাকি বাংলাদেশীদের বৈধতা দেয়ার ঘোষণা আসতে পারে দেশটির সরকারের কাছ থেকে।
মাহাথির মোহাম্মদ সরকারের কাছে পাঠানো ওই চিঠির অনুলিপি পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। চিঠির বিষয়টি জানতে গতকাল মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহ: শহীদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে হাইকমিশনের কূটনৈতিক একটি সূত্র এ প্রতিবেদককে নাম না প্রকাশের শর্তে অবৈধ বাংলাদেশীদের আবারো বৈধতা দেয়ার বিষয়ে মাহাথির মোহাম্মদ সরকারের কাছে একটি চিঠি দেয়ার কথা নিশ্চিত করেন।
চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সরকার তার দেশে থাকা অবৈধ বিদেশীদের বৈধ হওয়ার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। সেই হিসাবে বাংলাদেশী শ্রমিকেরা আড়াই বছর সময় পেয়েছিলেন। তারপরও অনেকেই বৈধ হতে পারেননি। এরমধ্যে অনেকেই স্থানীয় এজেন্ট ও দালালকে পাসপোর্ট ও রিংগিত দিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ার কারণে বৈধ হতে পারেননি বলে শত শত অভিযোগ হাইকমিশনে জমা পড়ে।
প্রতারিত এসব বাংলাদেশী যাতে আবারো বৈধ করে নেয়া হয় সেই বিষয়টি উল্লেখ করে হাইকমিশন থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। দ্রুত যাতে এ-সংক্রান্ত ঘোষণা আসে সে জন্য আমরা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এটা করতে পারলে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে তিনি জানান। অবৈধদের বৈধ হওয়ার ঘোষণা কত দিনের মধ্যে আসতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সহসাই হয়ে যেতে পারে।
এ দিকে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাহাথির মোহাম্মদ সরকারের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আপনারাই ঘোষণা করেছিলেন, এদেরকে (অবৈধ বাংলাদেশী) বৈধ করবেন। আপনারাই বলেছিলেন প্রতারিত শ্রমিকদের ওই সব কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করার জন্য। আপনাদের কথামতো তারা সেসব কোম্পানির সাথে যোগাযোগও করেছেন; কিন্তু সেসব কোম্পানি তাদের সাথে করেছে প্রতারণা। প্রতারিত হওয়ার পর এখন শ্রমিকেরা বৈধ তো হতে পারছেনই না, উল্টো তাদেরকে অ্যারেস্ট করতেছেন, অবৈধভাবে অবস্থানের কারণে। অবশ্যই আপনারা অ্যারেস্ট করবেন।
কারণ তারা তো অবৈধ? চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, শুধু অ্যারেস্টই নয়, বাংলাদেশে ফিরে যেতে তাদেরকে জেল, জরিমানাও দিতে হচ্ছে। কোন যুক্তিতে আপনারা অ্যারেস্ট করছেন, কোন যুক্তিতে তাদের জরিমানা করছেন? হ্যাঁ, আমরা বুঝতে পারছি আপনাদের লজিক একটাই, যারা অবৈধ তাদেরকে আপনারা অ্যারেস্ট করবেন। এটাই সত্য।
একজন শ্রমিক কত বছর যাবৎ অবৈধ আছে, ওই সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে তারা জরিমানা দিয়ে চলে যাবে। আপনাদের উদাহরণ সবই ঠিক আছে, আপনারা জানেন যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, জরিমানা করে দেশে পাঠানো হচ্ছে তারা তো এখানে অবৈধভাবে থাকতে চায় না। আপনারা আরো জানেন, বাংলাদেশীরা আপনাদের আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল।’ এমন কঠোর ভাষায় চিঠিটি লেখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া সরকারের লিগ্যালাইজেশন পোগ্রাম শুরু হয়েছিল অবৈধ বাংলাদেশীদের ঘিরে। পরে অন্যান্য দেশ সুযোগ নেয়। এতে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশী বৈধ হতে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। এরমধ্যে রেজিস্ট্রেশনে ভুল থাকার কারণে অনেকে বাদ পড়েছেন। কিছু বাদ পড়েছেন মাইজির কারণে। তারা রেজিস্ট্রেশন করালেও পরে আর পদক্ষেপ নেননি।
গতকাল মালয়েশিয়ার শ্রম উইংয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়ার স্থগিত শ্রমবাজার খোলার ব্যাপারে সব কিছু চূড়ান্তপর্যায়ে রয়েছে। পরবর্তী ধাপ যেটা আছে সেটা হচ্ছে এ দেশের কেবিনেটে উঠবে। এরপর আমাদের কেবিনেটে এটি এপ্রুভড করাতে হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা বলেন, এত কিছুর পরও এখনো যারা আকাশপথে অথবা অবৈধভাবে থাকার জন্য মালয়েশিয়ায় আসার চিন্তা করছে, তারা যেনো ভুলেও এভাবে না আসে। এখন অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় আসা মানেই বিপজ্জনক। আর অবৈধভাবে এলে মালয়েশিয়া সরকার কোনোভাবেই তাদের কাজ করার সুযোগ দেবে না।
এর আগে মালয়েশিয়া থেকে একাধিক বাংলাদেশী টেলিফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী বৈধতার জন্য যা যা নিয়ম সবই করেছিলাম। তারপরও আমরা বৈধ হতে পারিনি।
মালয়েশিয়ান আর বাংলাদেশী দালালেরা মিলে পাসপোর্ট-রিংগিত জমা নিয়ে পরে আর তাদের অনেকে ফোনই ধরেনি। যার কারণে আমরা আজ পালিয়ে এ দেশে আছি।
সূত্র : নিউজ ২৪