আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্রতম দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠার কারন হিসেবে ‘ইন্ডিয়া আউট’ আন্দোলনের ভুমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূরর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ‘ইন্ডিয়া আউট’ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন। আন্দোলনের প্রতি সচেতনতা ও সমর্থন বাড়াতে তিনি দ্বীপপুঞ্জ সফর করেছেন। তিনি বর্তমানে নীলন্ধুতে (ফাফু প্রবালপ্রাচীর) রয়েছেন। ইয়ামিন দাবি করেছেন, এই প্রচারণার লক্ষ্য কেবল মালদ্বীপের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। সম্প্রতি দুর্নীতি মামলায় নির্দোষ আখ্যা দিয়ে আদালত তাকে জেল থেকে মুক্তি দিলে এ আন্দোলন আরো বেগবান হয়। অবশ্য দেশটির সরকার এ আন্দোলনের জোরদার বিরোধিতা করছে।
মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনাদের অপসারণের দাবিতে রাজধানী মালে শহরের রাস্তায় মিছিল করেছে হাজার হাজার মানুষ। মালদ্বীপের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ ইয়ামিন মুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ তীব্র হয়। বিক্ষোভকারীরা মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার এবং ভারতের সঙ্গে সামরিক চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় পতাকা বহন করে এবং লাল শার্ট পরিহিত হয়ে মালদ্বীপে অবস্থানরত ভারতীয় সেনাদের অবিলম্বে অপসারণের আহ্বান জানায়। তারা বর্তমান প্রশাসন এবং নয়াদিল্লির বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রপতি সোলিহকে ২০১৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং ২০১৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে ভারতের সাথে সহযোগিতা করার জন্য অভিযুক্ত করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মালদ্বীপ দেশ হিসেবে ছোট হলেও পাশাপাশি দুই বৃহৎ শক্তি চীন ও ভারতের দৃষ্টি রয়েছে রাষ্ট্রটির ওপর। ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্বের কারণে দেশ দুটি মালদ্বীপের ওপর যে প্রভাব বিস্তার করতে চায়, তা প্রভাবিত করে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও। ফলে আবদুল্লাহ ইয়ামিন তার রাজনৈতিক দর্শনে যেমন ভারত বিরোধিতাকে লক্ষ্য বানিয়েছেন, তেমনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম সোলিহ তার পররাষ্ট্রনীতি সাজিয়েছেন ইন্ডিয়া ফার্স্ট নীতি দিয়ে। আগে থেকেই এ বিষয়টি স্পষ্ট থাকলেও গত বছর দেশটির রাজনীতি নতুন দিকে মোড় নেয়। বিরোধী দল প্রোগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপের (পিপিএম) নেতৃত্বে শুরু হয় ‘ইন্ডিয়া আউট’ আন্দোলন, যা দিনে দিনে জোরালো হয়ে উঠেছে। গত মাসে মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্ট দুর্নীতির অভিযোগ থেকে খালাস দিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনের কারাদণ্ড বাতিল করার পর থেকে এ আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠছে।
এদিকে ভারতকে মালদ্বীপের সবচেয়ে ‘ঘনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য মিত্র’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলনকারীদের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে ইব্রাহিম সলিহর নেতৃত্বাধীন সরকার। এতে মালদ্বীপের লোকজন আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বলছে, দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য এ স্বাধীনতাটুকুও এখন হারাতে বসেছে তাঁরা।
সুত্রঃ দ্য হিন্দু এবং মালদ্বীপ জার্নাল।