তিমির বনিক: হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার আবনায়ে জামিয়া মাহমুদিয়া মাদ্রাসা হামিদনগর থেকে তিন শিক্ষার্থীকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হওয়া তিন শিক্ষার্থী কখন, কীভাবে, কোথায় গেলো তা জানেনা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আনুমানিক বিকেল ৫ টা থেকে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থী হচ্ছে, বাহুবল উপজেলার ৪ নং সদর ইউনিয়নের উত্তরসুর গ্রামের হাফেজ আব্দুল শহিদ এর ছেলে মোঃ জাকির মিয়া (১৩),ভাদেশ্বর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের নিজগাঁও গ্রামের মোঃ প্যাকু মিয়া’র ছেলে মোঃ আব্দুল ওয়াহিদ (১৪), হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্ব কাটাখালি গ্রামের মৃতঃ ফিরোজ মিয়া’র পুত্র ও সাঈদ আহমদ এর ছোট ভাই রাহিম উদ্দিন (১৪)। নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থী একি প্রতিষ্ঠানের বাহুবল উপজেলার হামিদনগরে অবস্থিত জামেয়া মাহমুদিয়া মাদ্রাসার ছাত্র।
নিখোঁজ মোঃ জাকির মিয়ার এক সহপাঠী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানায়,গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাকির, ওয়াহিদ, রাহিম তিনজন বলেছিল তারা চিটাগাং কাজ করতে যাবে। মাদ্রাসার আশেপাশের কেউই তাদেরকে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে যেতে দেখেন নি।
নিখোঁজ মোঃ জাকির মিয়ার পিতা হাফেজ আব্দুল শহিদের ছেলে নিখোঁজের ব্যাপারে বাহুবল মডেল থানায় অফিসার ইনচার্জ বরাবর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। নিখোঁজ সংক্রান্ত ডায়েরির বরাত থেকে থেকে জানা যায়, ‘হাফেজ আব্দুল শহিদ এর এক ছেলে এক মেয়ে। তার ১৩ বছর বয়সের ছেলে মোঃ জাকির মিয়া বাহুবল উপজেলার হামিদনগরে অবস্থিত আবনায়ে জামিয়া মাহমুদিয়া হামিদনগর মাদ্রাসায় হাফেজি লেখাপড়া করে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর রোজ সোমবার বিকেল ৫ টার সময় উক্ত মাদ্রাসায় না পেয়ে প্রধান শিক্ষক হাফেজ মাওলানা কাওসার আহমেদকে মোবাইল ফোনে জাকিরের পিতা হাফেজ আব্দুল শহিদ’কে জানান। তখন হাফেজ আব্দুল শহিদ তার নিজ বাড়ী সহ পুরো উত্তরসূর গ্রাম খোঁজাখোঁজি করেও কোথাও পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ জাকির মিয়া’র পিতা হাফেজ আব্দুল শহিদ জানান, আমার সকল আত্নীয় স্বজন সহ পরিচিতদের বাড়ী খোঁজ নিয়ে তাকে না পেয়ে কোন উপান্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে ২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের নিকট যাই। জামেয়া মাহমুদিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ মাওলানা কাওসার আহমেদ সহ সকল শিক্ষকরা মিলে আমার ছেলে সহ নিখোঁজ অন্য দুই ছেলের বিষয়ে এক বৈঠকে বসেন এবং আমাকে থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত ডায়েরী করার পরামর্শ দেন। এখন পর্যন্ত আমার ছেলে জাকির ও তার সহপাঠী ওয়াহিদ, রাহিম-এর কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও জানান জাকিরের সহপাঠী বাহুবল সদরের ছেলেটির বক্তব্য অনুযায়ী আমি ২১ সেপ্টেম্বর রোজ বুধবার শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে ১৯ তারিখ রাতের সিসিটিভি ফুটেজ দেখি। সেই সিসিটিভি ফুটেজে তিনটি ছেলেকেই স্টেশন প্লাটফর্মে ঘুরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে, কিন্তু কোন ট্রেনে উঠতে দেখা যায়নি।
জাকিরের পিতা বলেন, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্ব কাটাখালির রাহিম উদ্দিনের বড় ভাই সাঈদ আহমদ-এর সাথে মোবাইল ফোনে ও পরে বাহুবল মডেল থানায় সরাসরি কথা বলে জানতে পারি, রাহিম এর চাচা, মামা ও দুলাভাই সহ অনেক আত্মীয় চট্টগ্রামে থাকেন। নিখোঁজের ৮ দিনেও চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখোঁজি করে তাদের কোন হদিস মিলেনি।
হাফেজ আব্দুল শহিদ ও সাঈদ আহমদের অভিযোগ এতো বড় একটি মাদ্রাসা কোথাও একটি সিসি টিভি ক্যামেরা নেই কেনো? ক্যামেরা থাকলে অন্তত তারা তিনজন কি ধরনের পোশাক পরে, কারো সাথে বা কোনদিকে বের হয়েছে তা বুঝা যেতো!
আজ বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত নিখোঁজ তিন শিশুর খোঁজ না পাওয়ায় বাহুবলের সর্বস্তরের জনমনে শিশু ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম খাঁন জানান, নিখোঁজ তিন শিশুর সন্ধানে পুলিশের অভিযান চলছে। আমরা আশাকরছি দ্রুত তাদের সন্ধান পাওয়া যাবে।