মাদক অপরাধী, চোরাকারবারি, পৃষ্ঠপোষক এবং তাদের সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি প্রয়োগ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে মঙ্গলবার এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের শিক্ষাক্রমে মাদক সংক্রান্ত বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়াবলি অন্তর্ভুক্ত করে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মাদকের অপব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পথশিশুসহ যারা মাদকাসক্ত হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে, তাদেরকে সরকারি ও বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার প্রতিরোধ ও মাদকাসক্তিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে জাতিসংঘ ঘোষিত “মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস” পালিত হচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।’
আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য, ‘প্রমাণ স্পষ্ট: প্রতিরোধে বিনিয়োগ করুন’ অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং সঠিক হয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে সদ্য স্বাধীন দেশে ফিরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৭২ সালের ১৫ জানুয়ারি এক সরকারি আদেশের মাধ্যমে মদ, জুয়া, হাউজি, ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ করেছিলেন।
এমনকি তিনি সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন, ‘জনগণের পুষ্টির স্তর -উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন এবং বিশেষতঃ আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং জনস্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যদের বলেন, “ঘোড়দৌড় আর মদ্যপানে কোনো জাতি বা দেশের কল্যাণ সাধিত হতে পারে না। তাই বাংলাদেশে এসব সামাজিক অনাচারের স্থান হবে না”।’
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার মাদকের আগ্রাসন থেকে দেশের জনগণ তথা যুব সমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য নানা ধরনের বাস্তবমুখী এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে আধুনিকায়ন করে প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছেন।
তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ সংশোধন করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) আইন, ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই আইনের আওতায় বিভিন্ন বিধিমালা ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলার সদর উপজেলায় অধিদপ্তরের নিজস্ব প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমান সরকার মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের সমাজের মূলধারায় আনা ও দেশের উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে তাদের জীবনমান পরিবর্তনে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। ঢাকার কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের আধুনিকীকরণ প্রকল্প চলমান আছে এবং পাশাপাশি ৭টি বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী, বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রসমূহকে সরকারি অনুদান প্রদানের কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি আশা করি, আমাদের যুব সমাজ মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে তাদের মেধা ও উদ্ভাবনী প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও মাদকাসক্তিমুক্ত “স্মার্ট বাংলাদেশ” বিনির্মাণে সক্ষম হবে।’
তিনি বলেন, ‘তারা রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা, পারিবারিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টির মাধ্যমে মাদকের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে তাদের দৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করেছি।’ তিনি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাদকাসক্তিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানান।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম