তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: ২০শে জুলাই শ্রীমঙ্গল তথা মৌলভীবাজার জেলার বিশিষ্ট মঞ্চাভিনেত্রী, মঞ্চের পাখি নাট্যকর্মী মৌসুমী নাগ মৌ এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর অকাল প্রয়াণ দিবসে মৌসুমী নাগ এর প্রতি বিডিজার্নাল ডট নেট পরিবারের পক্ষ থেকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মৌসুমী নাগ ১৯৮৫ সালের ২৯ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলের শান্তিবাগ আবাসিক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রঞ্জন বৈদ্য। প্রয়াত রঞ্জন বৈদ্যের তিন মেয়ের মধ্যে মৌসুমী ছিলেন সবার বড়।।ছোটবেলা থেকেই মৌসুমী ছিলেন প্রতিভাবান একজন মানুষ। সদাহাস্যজ্বল এই মানুষটি একাধারে নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত শিল্পী, চিত্রশিল্পী, আবৃত্তিকার, উপস্থাপিকা, রন্ধনশিল্পী, আবৃত্তি শিক্ষক এবং একজন সফল অভিনেত্রী। অভিনয় জগতে ছিলো তাঁর অসাধারণ দক্ষতা। মঞ্চে এবং ক্যামেরার সামনে তাঁর অভিনয় দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হতেন দর্শক, নির্দেশক, পরিচালকরা। মঞ্চে তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটক একজন লক্ষ্মীন্দর ও চোর নাটক দুটি ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এছাড়াও তিনি একাধিক পথনাটকও করেছেন। ছোটপর্দার তাঁর অভিনীত অসংখ্য এক পর্বের নাটক এবং ৩/৪টি ধারাবাহিক নাটক রয়েছে। ইংল্যান্ডের চ্যানেল এস-এ এই নাটকগুলো প্রচারিত হয়।
এছাড়াও দেশের জাতীয় গণমাধ্যম গুলোর একাধিক চ্যানেলে পার্শ্বচরিত্রে বড় অভিনেতাদের সাথে বিভিন্ন নাটকেও অভিনয় করেছেন। তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডি জার্নাল ডট নেট এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
মৌসুমী নাগ পড়াশুনায়ও অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। অনার্স তৃতীয়বর্ষের ছাত্রী থাকাকালীন ২০০৬ সালে তিনি দীর্ঘ ৭ বছরের প্রেমের পরিনতিতে নাট্যকর্মী পংকজ কুমার নাগ কে বিয়ে করেন। তাঁদের সাড়ে ১১ বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। সদাহাস্যজ্বল মৌসুমী নাগ ২ হাজার ২০ সালের ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ জানতে পারেন তিনি আবার মা হতে চলেছেন। নতুন অতিথি আসার আনন্দে তিনি স্বামী সন্তান, সংসার, চাকরি নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে দিন যাপন করছিলেন এমতাবস্থায় ২ হাজার ২১ সালের জুলাই মাসে হঠাৎ তিনি করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে পড়েন। প্রথম করোনা টেস্টে, রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে অবস্থার অবনতি হওয়ায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দ্বিতীয়বার করোনা টেস্ট করানো হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শ্বাসকষ্ট অতিরিক্ত শুরু হলে তাঁকে আই.সি.ইউ এ স্থানান্তর করা হয়। বাংলাদেশ কোভিড প্রোটকলের সকল ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। হাইফ্লো অক্সিজেন প্রয়োগ করা হয়। ১৯ জুলাই তাঁর গর্ভে থাকা আট মাসের কন্যা সন্তানটি মারা যায়। ৭ দিন জীবনের সাথে নিদারুণ যুদ্ধ করে পরেরদিন ২০ জুলাই ভোর ৪ টা ৪০ মিনিটে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পারি জমান মঞ্চের পাখি নাট্যকর্মী মৌসুমি নাগ মৌ। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।