মঙ্গলের বড় একটি হ্রদ যে রয়েছে, দু-বছর আগেই তা নিশ্চিত করেছিলেন গবেষকরা। মঙ্গলগ্রহের সে হ্রদের (saltwater lake) জল যে নোনা বিজ্ঞানীরা তা-ও জানিয়েছিলেন। আরও দু-বছর ধরে মঙ্গলের লালমাটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে গ্রহ বিজ্ঞানীরা আরও তিনটি লেকের সন্ধান দিলেন। কোনও অনুমান নয়। দৃঢ়তার সঙ্গেই গবেষকরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলের (Mars) পৃষ্ঠের আড়ালে আরও তিনটি হ্রদ লুকয়ে, যা তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলগ্রহের বরফে আবৃত লেকগুলি। নেচার অ্যাস্ট্রোনমিতে সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখানেই তাঁরা উল্লেখ করেন, দু-বছর আগে সন্ধান মেলা বড় লবণহ্রদের পাশাপাশি আরও তিনটি হ্রদ তাঁদের নজরে এসেছে।
গবেষক দলের অন্যতম, রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহ বিজ্ঞানী এলিনা পেটিনেল্লি জানান, বড় হ্রদটি ছাড়াও আমরা আরও তিনটি লেক মঙ্গলের বুকে দেখতে পেয়েছি। মূল লেক বা হ্রদের কাছাকাছি রয়েছে বাকি তিনটি লেকও। তাঁর কথায়, ‘এটা একটা জটিল পদ্ধতি।’
গবেষক দলটির দাবি, চারটি লেক ৭৫ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। জর্মানির আয়তনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় হ্রদটি ৩০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এই কেন্দ্রীয় লেকটি ঘিরেই রয়েছে তিনটি ছোট ছোট হ্রদ। এক-একটি হ্রদ কয়েক কিলোমিটার প্রশস্ত।
মঙ্গলগ্রহের দক্ষিণ মেরুতে দু-বছর আগেই বরফে আচ্ছাদিত বড় হ্রদটির সন্ধান দিয়েছিলেন গ্রহ বিজ্ঞানীরা। তখন দাবি করা হয়েছিল, হ্রদটির আয়তন হবে ২০ কিলোমিটার। তার আগে বিভিন্ন গবেষণায় মঙ্গলে কোনও কোনও জায়গায় জল প্রবাহের ইঙ্গিত মিললেও স্থায়ী জলাধারের অস্তিত্বের কথা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারেননি। বাতাসের ঘনত্ব কম থাকায় ঠান্ডায় জলাধারটি বরফের নীচে রয়েছে।
মার্শ এক্সপ্রেস নামে যে নভোযান মঙ্গলের কক্ষপথ পরিদর্শন করছে, তার ভেতরে মারসিস নামে একটি রেডার এই জলাধারের সন্ধান দিয়েছিল। ইতালির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের শিক্ষক রবার্তো ওরোসেই দু-বছর আগের ওই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেসময় রবার্তো দাবি করেছিলেন, ‘হ্রদটি আকারে তেমন বড় নয়। তবে, এটি সত্যিকারের জলাধার। পাথর বা বরফের খাঁজে কিছু জল আটকে আছে, এটি এমন নয়। পুরাদস্তুর হ্রদ।’
মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা কি বাড়ল? দু-বছর আগেই সে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে, এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না বলেই মত প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও জীবনের অস্তিত্ব নির্ভর করে সেখানে জল রয়েছে কি না, তার উপর। মঙ্গলগ্রহে জল থাকায় সম্ভাবনা বেড়ে গেল। ব্রিটেনের ওপেন ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষকের কথায়, ‘আমরা জানি মঙ্গলগ্রহের উপরিভাগ প্রাণের জন্য অনুকূল নয়, ফলে এখন উপরিভাগের নীচে জীবনের সন্ধান করতে হবে।’
বিজ্ঞানীদের ধারণা, মঙ্গলের জলাধারে জলের তাপমাত্রা -১০ থেকে -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই ঠান্ডায় লেকের জল তরল থাকার অর্থ তাতে প্রচুর লবণ রয়েছে। ব্রিটেনের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ক্লেয়ার কাজিনস বছর দুই আগে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলছিলেন, ‘এমন হতে পারে ওই জল খুবই ঠান্ডা এবং লবণভর্তি। এই অবস্থায় যে কোনও প্রাণীর জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। তর্কবিতর্ক থাকবেই। তবে, গবেষকরা জলের উপস্থিতি নিশ্চিত করার পর, মঙ্গলগ্রহে প্রাণের সন্ধান নিয়ে গবেষণায় যে গতি পাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।