ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সেজে ভাতা আত্মসাতের মামলায় জেল খাটা মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ৭নং ফুলতলা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য ও জুড়ী উপজেলা প্রেসক্লাবের সহ-সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মাহবুবুল আলম রওশন আবারও মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হওয়ার পর আত্মসাতের অর্থ ফেরত চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব এ এইচ মহসিন রেজা তাঁকে চিঠি ইস্যু করেন। ভাতা আত্মসাৎকারী সেই রওশন আগামী ২৯ ডিসেম্বর ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
তদন্তে এর আগে রওশনের বিরুদ্ধে মৃত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা উত্তোলনের প্রমান পেয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতে প্রতিবেদন প্রদান করেন। এরপর তিনি আত্নসাতের মামলায় কারাভোগ করেছেন। এ মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে বিজ্ঞ আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছিলেন।
জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত কাগজ জাল জালিয়াতি করে মাহবুব আলম রওশন রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ও ভাতা আত্মসাৎ করে আসছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে দীর্ঘ অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষে পিবিআই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মাহবুবুল আলম রওশন এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির আদেশ প্রদান করেন।
জানা গেছে, কমলগঞ্জ উপজেলার ১নং রহিমপুর ইউনিয়নের কালেঙ্গা গ্রামের মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা শফিক মিয়ার ভুয়া সন্তান সেজে জুড়ী উপজেলার ৭নং ফুলতলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মাহবুবুল আলম রওশন ভাতা উত্তোলন করে আসছিলেন।
এ ঘটনায় কালেঙ্গা গ্রামের মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিক মিয়ার ছেলে মোঃ কামাল মিয়া বাদী হয়ে বিগত ২৯-০৩-২০২১ইং তারিখে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মৌলভীবাজার (মামলা নং- সি.আর-৩৮/২০২১ (জুড়ী) দায়ের করেন।
এরপর থেকেই প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধার সন্তান মোঃ কামাল মিয়াকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধমকি অব্যাহত রাখেন। ৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিক মিয়ার স্ত্রী আজিরুন বেগম।
আজিরুন বেগম লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান দাবীদার মাহবুবুল আলম রওশন একজন প্রতারক, মিথ্যাবাদী, ধোঁকাবাজ। তার বীর মুক্তিযুদ্ধা স্বামী দুই পুত্র ও চার কন্যা সন্তানকে রেখে ২০০৬ সালের ১১ ডিসেম্বর কালেঙ্গা গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৭ সালের জুলাই মাস হতে নিয়মিত স্বামীর উত্তরাধীকারী সূত্রে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করে আসছিলেন।
পরবর্তীতে দীর্ঘদিন ভাতা বন্ধ থাকার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, তার স্বামীর ভূয়া সন্তান সেজে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করছেন সাংবাদিক মাহবুবুল আলম রওশন।
আজিরুন বেগম জানান, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ পাঁচ বছর রওশন জালিয়াতি করে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আত্মসাৎ করেছে। গত দুই মাস ধরে আমরা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছি। রওশনের কাছ থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধার হলে আমরা বকেয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাবো বলে ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাহবুবুল আলম রওশন একাধিক গনমাধ্যমকে বলেন, আমি হাইকোর্টে বিষয়টি নিয়ে একটি রিট করেছি।
জুড়ী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, মাহবুবুল আলম রওশন আমাকে জানিয়েছে এ বিষয়ে সে হাইকোর্টে রিট করেছে। চূড়ান্ত রায়ের পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।