দেশে করোনা ভাইরাসের চলমান পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। ফলে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও ভিডিও কানফারেন্সের মাধ্যমে বিচার কাজ পরিচালনা করা যাবে।
শনিবার (০৯ মে) রাতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ নামের ওই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
এর আগে ৭ মে ওই অধ্যাদেশের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ওই অধ্যাদেশ জারি করেন। অধ্যাদেশে আদালত বলতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা হাইকোর্ট বিভাগসহ সব অধস্তন আদালত বা ট্রাইব্যুনাল বোঝানো হয়েছে। ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি বলতে অডিও-ভিডিও বা অনুরূপ অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির আদালতের বিচার বিভাগীয় কার্যধারায় উপস্থিত থাকা বা অংশগ্রহণ বোঝানো হয়েছে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যেহেতু মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্যগ্রহণ বা যুক্তিতর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় প্রদানকালে পক্ষগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আদালতকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা প্রদানের জন্য বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। যেহেতু সংসদ অধিবেশন নেই এবং রাষ্ট্রপতির কাছে উহা সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান আছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে ফিজিক্যালি আদালত চালানোর সুযোগ না থাকায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে যার যার অবস্থানে থেকে বিচার কার্যক্রম চালানোর ব্যবস্থা করতে সরকাকে অনুরোধ করেন সুপ্রিম কোর্ট।
দীর্ঘ সময় ধরে আদালত বন্ধ থাকায় মামলাজট বাড়ার পাশাপাশি বিচারপ্রার্থীরা বিচারপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন- এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ডিজিটাল মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম করার অধ্যাদেশের খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করে আইন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে সাধারণ ছুটিতে গত ২৬ মার্চ থেকে অফিস-আদালত বন্ধ রয়েছে। এখন পার্লামেন্ট চালু না থাকায় আইন করা যাবে না। এজন্য জরুরিভিত্তিতে এ বিষয়ে অধ্যাদেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বা তাদের পক্ষে নিযুক্ত বিজ্ঞ আইনজীবীদের এবং সাক্ষীদের উপস্থিতির মাধ্যমে মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। সমগ্র বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ মহামারি রোধকল্পে এক মাসের অধিক সময় ধরে কতিপয় ব্যতিক্রম ব্যতীত আদালতসহ সরকারি-বেসরকারি সকল ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষের সমাগম হয় এমন সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আদালত বন্ধ থাকার মামলাজট যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি বিচারপ্রার্থীরা বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষে ভিডিও কনফারেন্সিংসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম করতে এই অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
মন্ত্রিপিরষদ সচিব বলেন, এই ব্যবস্থায় আসামিকে জেলখানায় রেখে, আইনজীবীকে বাসায় রেখে ও সাক্ষীকে অন্য জায়গায় রেখে ভিডিও কনফারেন্সিং ও অন্যান্য ডিজিটাল পদ্ধতি অ্যাপ্লাই করে বিচারকার্য করা সম্ভব হবে। এটাই হল এই অধ্যাদেশের মূল বিষয়।
এর আগে ২৪ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানানোর বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয় বলে সভাসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।