হিন্দু প্রতিবেশীদের বিক্ষোভের মুখে বাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন এক মুসলিম দম্পতি। শুধুমাত্র মুসলিম ধর্মের অনুসারী হওয়ায় তাদের সেখানে থাকতে দেয়নি হিন্দু প্রতিবেশীরা।
ভারতের উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদ শহরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসি জানিয়েছে, মোরাদাবাদের অভিজাত এলাকায় একটি নতুন বাড়ি কিনেছিলেন এক মুসলিম চিকিৎসক দম্পতি। কিন্তু হিন্দু প্রতিবেশীরা ওই বাড়িতে তাদের উঠতে দেননি। প্রতিবেশিদের দাবি, এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত, এখানে অন্য সম্প্রদায়ের কাউকে থাকতে দেওয়া উচিত নয়।
কয়েকদির আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, মোরাদাবাদের স্থানীয় বাসিন্দারা। বিক্ষোভ করছেন।
মেঘা অরোরা নামে একজন নারী বলছেন, ‘আমাদের স্থানীয় মন্দিরের সামনে মুসলিম পরিবার থাকবে, এটা আমরা সহ্য করব না। এটা আমাদের নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ও।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাড়ি বিক্রির চুক্তি বাতিল চাই। প্রশাসনকেও বলছি নতুন মালিকদের নামে বাড়ির নিবন্ধন বাতিল করতে। আমরা অন্য ধর্মবিশ্বাসের মানুষকে এখানে এসে থাকতে দিতে পারি না। তারা চলে না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের বিক্ষোভ চালিয়ে যাব।’
বাড়িটির আগের মালিক ড. অশোক বাজাজ বিবিসিকে বলেন, ‘উভয় পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন মুসলিম দম্পতি ওই বাড়িটি একজন হিন্দুর কাছে পুনরায় বিক্রি করবেন।’
এরপর ড. অশোক খানিকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের শহরের পরিবেশ আর আগের মতো নেই, এই ঘটনার মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। এমনটা ঘটবে, আমি কখনোই ভাবিনি।’
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও নীতিশাস্ত্রের অধ্যাপক তানভীর আইজাজ বলেন, ‘ধর্মীয় মেরুকরণ এখন গ্রাম থেকে শহরেও শিকড় গেড়ে বসছে। এটি সম্পূর্ণ সংবিধানবিরোধী এবং একটি মানুষের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।’
ভারতের অনেক শহরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষত মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য সাধারণ ঘটনা। অনেক হাউজিং সোসাইটিতে মুসলিমদের প্রবেশ ঠেকাতে বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাসের শর্ত—যেমন নিরামিষভোজী হওয়ার বাধ্যবাধকতা—চাপিয়ে দেওয়া হয়।
গুজরাট, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে—এমনকি রাজধানী দিল্লিতেও—মুসলিমরা প্রায়ই হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় বাড়ি কিনতে বা ভাড়া নিতে পারেন না। কয়েক বছর আগে বলিউড অভিনেতা ইমরান হাশমি অভিযোগ করেছিলেন, মুসলিম হওয়ার কারণে তাকে মুম্বাইয়ে একটি ফ্ল্যাট দেওয়া হয়নি।
মুরাদাবাদের ঘটনাটি ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
কমেডিয়ান আকাশ ব্যানার্জি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘#নিউইন্ডিয়া-তে আপনাকে স্বাগত। একজন ডাক্তার আরেক ডাক্তারের কাছে বাড়ি বিক্রি করেছেন… এটা নিয়ে কেন মুরাদাবাদের একটা অভিজাত হাউজিং সোসাইটিতে বিশাল বিক্ষোভ/উত্তেজনার তৈরি হবে?’
কমিউনিস্ট পার্টি অভ ইন্ডিয়া-র (মার্ক্সিস্ট) এমপি জন ব্রিটাস লিখেছেন, ‘জাতি হিসেবে আমরা সবসময় আমাদের বৈচিত্র্যের ঐক্য নিয়ে গর্ব করি। এই ধরনের ঘটনার জন্য আমাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।’
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম