মোঃ সদরুল কাদির (শাওন), আন্তর্জাতিক ডেস্কঃঃ গরু নিয়ে ভারতে গত কয়েক বছর ধরে নানান বিচিত্র ঘটনা ঘটেই চলেছে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গরু জবাই করার দায়ে বা এমন গুজব ছড়িয়ে এখন পর্যন্ত কয়েকশ মানুষকে হত্যা করেছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতাকর্মীরা। গরু নিয়ে আরও অনেক বিচিত্র খবর প্রতিদিন ভারত ও বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়।
এসব ঘটনার বিচিত্রতা খবর হিসেবে বহু মানুষের হাসির খোরাক জোগালেও খোদ ভারতের লাখো কৃষক চোখের পানিতে ভাসছেন গরু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞার কারণে।
উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানসহ ভারতের বেশ কয়েকটি প্রদেশের মানুষ পুরোপুরি কৃর্ষি ক্ষেতের ওপর নির্ভরশীল। আবার এসব এলাকায় প্রায় প্রতি বছরই খরার প্রকোপ দেখা দেয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। ক্ষতি পোষাতে না পেরে, আবার অনেক ক্ষেত্রে ঋণের বোঝা বইতে না পেরে কৃষকদের আত্মহত্যার ঘটনা ভারতে ডালভাত ব্যাপার।
এর সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যোগ হয়েছে মনুষ্য আরোপিত দুর্যোগ। অর্থাৎ, গরু জবাইয়ে নিষেধজ্ঞা। অনেক কৃষক আগে গরু পোষতেন, এবং চাষের মৌসুমে সেই গরু দিয়ে চাষের কাজ সেরে বাজারে বিক্রি করে দিতেন।
ঘরে রাখতেন গাই গরুকে। যাতে আবারও সেটি থেকে বাচ্চা পেতে পারেন। বাড়তি গরু ঘরে রেখে খাওয়ানোর যে খরচ সেটি থেকে কৃষকরা বেঁচে যেতেন। আবারও চাষের মৌসুম শুরু হলে প্রয়োজনে নতুন ষাঁড় কিনে নিতেন। অথবা ঘরে থাকা বাছুররা বড় হয়ে উঠলে সেগুলো দিয়ে চাষের কাজ করতেন।
কিন্তু গরু বিক্রি, বিশেষ করে জবাইয়ের উদ্দেশ্য, বিভিন্ন রাজ্যে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার পর এখন বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। এখন চাষ শেষে গরুগুলোকে গোয়ালে রেখে মাসের পর মাস খাওয়াতে হচ্ছে।
যেসব এলাকায় খরা দেখা দিচ্ছে সেসব এলাকার কৃষকরা ভালো মতো ফসল না পাওয়ায় ঘরে থাকা গরুগুলোকে খাবার দিতে সক্ষম হচ্ছেন না। এমনকি নিজের সন্তানদের জন্যই তিন বেলা খাবার জোগাড় কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে তাদের জন্য। গরু বিক্রি করতে পারলে এক দিকে যেমন সংসার চালানোর খরচ আসতো, তেমনি গরুর জন্য খাবার জোগাড়ের চিন্তা করতে হতো না।
কিন্তু এখন বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা পড়েছেন বিপাকে। এমতাবস্থায় বাধ্য হয়ে গোয়ালের গরুগুলোকে অজানার উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিচ্ছেন। বিক্রি করে কিছু না পেলেন, ওদের খাবারের পেছনে তো আর খরচ করতে হলো না! আগে যে গরু ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি করা যেত, সেটি এখন একটি বোঝায় পরিণত হয়েছে।
এভাবে উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে রাস্তাঘাটে বেওয়ারিশ গরুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভারতীয় পত্রিকা দ্য ইকোনোমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেওয়ারিশ গরুর পাল মিলে অন্য কৃষকের ফসলের ক্ষেতে হানা দিয়ে নষ্ট করার ঘটনা এতই বেড়েছে যে, গ্রামে গ্রামে পালা করে রাতভর ফসল পাহারা দিতে হচ্ছে।
বেওয়ারিশ গরুদের অনেকে রাস্তায় মারা যাচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে স্থানীয়দের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসব মৃত গরুকে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে মাটিচাপা দেয়ার জন্য সরকারকে টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
ভারত এবার প্রথমবারের মতো মৃত গরু সৎকারের জন্য শ্মশান তৈরি হবে। শুক্রবার মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভোপাল পৌরসভার মেয়র অলোক শর্মা এমন ষোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোনো গরুর অস্বাভাবিক বা অসময়ে মৃত্যু হলে ওই শ্মশানে দাহ করা হবে। এটিই হবে ভারতের গরু সৎকারের জন্য প্রথম শ্মশান।
গরু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারত অর্থনৈতিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে। বিশেষ করে দেউলিয়া হচ্ছেন লাখো কৃষক, যারা গরু পালনের মাধ্যমে কৃষি কাজ ও সংসার চালাতেন।