রাজনীতি আসলে জটিল বিষয়। সত্যটিও অস্বীকার করতে দ্বিধান্বিত হননা নেতারা। নৈতিকদতাবোধটিও রক্ষা করেন না শিক্ষিত হয়েও।বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যের বিজয়। স্বৈরাচার আর নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে নিপীড়িত জনতার জয়, গণতন্ত্রের বিজয়। এই দুর্লভ বিজয় কয়েকটি বিষয়কে নিশ্চিত করে দিয়েছে। বাংলাদেশ হবে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সব ধর্ম বর্ণের মানুষের সম্মিলিত সহাবস্থান। বঙ্গবন্ধু হবেন ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্ধ অংশ এবং জাতির পিতা। সামাজতান্ত্রিক মূল্যবোধ আর বাঙালী জাতিতত্ত্ব নিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র। ৩০ লক্ষ শহীদের ত্যাগের মূল্যায়ন হয়েছিল এভাবেই পবিত্র সংবিধানে। কিন্তু মৌলতান্ত্রিক পাকিস্তানের পরাজিত স্বৈরতন্ত্র এবং দেশীয় তাবেদার সাম্রাজ্যবাদের মদদে ‘৭৫-এ আঘাত করে দেশের মৌলিক আদর্শে। স্বপরিবারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে। সংঘটিত হতে থাকে উগ্রবাদী মৌলবাদ। এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছে ‘৭৫-এর বেনিফিশিয়ারী বি এন পি। পবিত্র ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে উগ্রবাদ ছড়িয়ে দিয়েছে দেশে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শান্তির ধর্ম ইসলামকে প্রচার ও প্রসারের জন্য। ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাবলীগের সুবিধার্থে রমনা পার্কে মসজীদের জায়গা বরাদ্ধ দিয়েছিলেন। ৭২ এর ৪ ঠা ফেব্রুয়ারী ইসরাইলের স্বীকৃতির প্রস্তাব রাষ্ট্রিয়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ফিলিস্তানী মোসলমানদের ন্যায্য দাবী পুরণের শর্তে। সেই বাংলাদেশে এখন উগ্র মৌলিবাদ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যই উপড়ে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়। একজন মুসলিম হিসাবে আমিও চাই আমার দেশে ইসলামের শাসন চালু হউক যেমন করে রাষ্ট্র চালিয়েছেন খলিফা ওমর (রাঃ)। পৃথিবীর কোন মুসলিম দেশেই খলিফা ওমরের (রাঃ) শাসন চলছে মনে হয়না। আরব্য রাজতন্ত্র ইসলামে অনুমোদন দেয়নি। তুরষ্ক, ব্রুনাই কিংবা ইরান কোথায় আছে ইসলামের শাসন? বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ইসলামি আইন চালু রেখেছে সব দেশেই। ইসলামের সব আইনই বাংলাদেশে রয়েছে। কেউ কোন ফতোয়া দিলে তা’ও আইন করা যেতে পারে কিন্তু সব ওলামাদের এক হতে হবে। ভাস্কর্য নিয়েও ইসলামি দলগুলি ভিন্ন মত পোষণ করছে। কার বক্তব্যটি সঠিক বলে গ্রহণ করা হবে? ইসলামের খলিফা যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন তাদের প্রত্যেকেরই জীবন ছিল সাধারণ এবং বিলাসবিহীন। এখন যারা ইসলামের নামে ভাস্কর্য ভাঙ্গার হুঙ্কার দেন তাদের কারো জীবনই ইসলামের খলিফাদের মত নয় বরং আরব্য রাজাদের মত। উগ্রবাদি বক্তব্য প্রচার করে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রসারের বদলে সন্ত্রাসবাদের বিষ ছড়াচ্ছে রাজনীতির নামে। ধর্মপ্রাণ মোসলমান এবং ইসলামের অনুসারীদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে ধর্মের নামে। সেই কারণেই এখন শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মকে অধিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা জরুরী। পবিত্র কোরআন এবং হাদিস বাংলায় তরজমা হয়ে গেছে আগেই। পাঠ্য বিষয়ে কোরআন হাদিসের সংযোজনের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ জনগণকে হাদিস কোরআন শেখানোর প্রকল্প চালু করা হউক। এমনটি হলে কেউ ধর্মকে ব্যবহার করে কেউ আর রাজনীতি করতে পারবেনা। বিষয়টি মনে হয় এখন দেশের স্বার্থে জরুরী। প্রস্তাবটি ভেবে দেখতে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
টরন্টো, কানাডা
১ ডিসম্বর ২০২০।