বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নামটি পরিচিত কিন্তু, আলোচনা হয়েছে কমই। এবারই দেখছি অনেকেই সোসাল মিডিয়াতে খুব লেখালেখি করছেন বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মদিনে। এই জন্ম তারিখটিও আগে খুব শোনা যায়নি। এইসব লেখা পড়ে ভালোই লাগছে কিন্তু, লেখালেখির উদ্দেশ্য এই মহয়সি নারীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন না প্রধানমন্ত্রীর আনুকুল্য পাওয়া, বোঝা মুশকিল। তবে অনেক তথ্যই বেড়িয়ে আসছে বেগম মুজিবের রাজনৈতিক ভুমিকা নিয়ে। বংগবন্ধু যখন জেলে তখন, বেগম মুজিব ছিলেন আওয়ামী লীগের চালিকা শক্তি। এক লেখায় পড়েছি, বেগম মুজিব বলেছেন “বংগবন্ধু জেলে গেলে দলের অনেক নেতাই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের ঐ বাড়ীর পাশ দিয়েও হাটতেননা”। অথচ সম্মেলনের জায়গার অনুমুতি না পাওয়ায় বেগম মুজিবই নীজ বাড়ীতে সম্মেলনের অনুমুতি দিয়েছেন। মিজানুর রহমান চৌধুরীর (প্রায়ত এবং পরে জাতীয় পার্টির নেতা) লেখা বই ” তিন কাল” এ একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। বংগবন্ধু যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় সেনাসদরে বন্দি তখন, খন্দকার মোশতক প্রায়ই বংগবন্ধুর বাড়ীতে গিয়ে বেগম মুজিবের কাছে বংগবন্ধুকে পেরোলে বের করে আনার প্রস্তাব করেছেন। একই প্রস্তাব মোশতাক বংগবন্ধুর কাছেও করেছেন, বংগবন্ধু জবাব দেননি। খন্দকার মোশতাক বেগম মুজিবকে বুঝিয়েছেন, তাজউদ্দিনরা মুজিবকে বের করতে চায়না। মুজিব জেলে থাকলে তাজউদ্দিনরা নেতা হতে চায়। বেগম মুজিব বংগবন্ধুর সংগে সাক্ষাত করতে গেলে বংগবন্ধু ভেবেছিলেন হয়ত বেগম মুজিব বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন কিন্তু, বেগম মুজিব সংসারের, ছেলেমেয়ের বিষয়ে অনেক কথা বলেছে, মোশতকের প্রস্তাবের বিষয়ে কিছুই বললেননি। অগত্যা বংগবন্ধু নিজেই কথাটি বলেছেন। অনেক্ষন চুপ থেকে বেগম মুজিব বললেন ” মোশতাক ভাইয়ের কথায় তুমি যদি তা করো তাহলে আমার বাড়ীতে আসতে পারবেনা। আমি বাকি জীবন তোমার ছেলেপুলে নিয়ে একাই থাকতে পারবো, আমি চাইনা আমার স্বামী বাংলার মানুষের সংগে বেঈমানী করে মুক্ত হয়ে আসুক”। বংগবন্ধু রাজনীতি করেছেন, জেল খেটেছেন। বেগম মুজিবও যৌবন বিসর্জন দিয়েছেন দেশের মানূষের জন্য। কোনটাকে ত্যগ বলবো জানিনা তবে, রাজনীতির পেছনের রাজনীতি করেছেন বেগম মুজিব। রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হয়েও জীবন কাটিয়েছেন সাধারন গ্রাম্য বধু/ গৃহিনীর মত। আমরন রান্নাঘরের দায়িত্বটি নীজের কাছেই রেখেছেন। শুধু আওয়ামী লীগের নয়, বংলাদেশের রাজনীতির যে কোন নেতাই এক কথায় বলে ” মুজিব ভাবীর” কথা। বাংগালি ঘরে খাবারের সাধ পেয়েছেন বংগবন্ধু ভবনেই। আমাদের সৌভাগ্য হয়নি এই মহিয়সী নারীর মমতা দেখার কিন্তু, জাতী আজ আস্ফালন করে কি হারিয়েছে ৭৫ এর ১৫ ই আগষ্টের অন্ধকার রাতে। যত শব্দই লিখি এই মহিয়সীর নামে, কম হয়ে যাবে। শ্রদ্ধা জানাই, সালাম জানাই বংগমাতকে।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
৮ আগষ্ট ২০২০