বুড়িগঙ্গার বহু গল্প আছে। একসময় এই নদীতে পাল তোলা নৌকার বিচিত্র রূপ দেখা যেত। ভাবুক প্রেমিক পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির সৌন্দার্য লীলা উপভোগ করত নিমগ্নে। টলটলে পানি আর ঢেউয়ের শব্দে উদ্বেলিত হত নারীর মন। উদাস মাঝিরা অলস রাতে কুপি জালিয়ে ভাটিয়ালির সূরে মাতাল করত খেটে খাওয়া মানুষদের। এসব গল্প শুনে ভাবুক হয়েছি আমরাও। বুড়িগঙ্গার কিনারে বাঁশের ভাসমান ডেরায় বসে বড়শি ফেলেছি নদীতে। মুগ্ধ পরিবেশ আর মৃদুমন্দ বাতাসে ঢেউয়ের কলতানে মাছ ধরে উল্লাস করেছি আনন্দে। রচনা লিখেছি বুড়িগঙ্গায় নৌকা ভ্রমনের। মনের ভাবনা কাগজে লিখে ভাল নম্বর পেয়েছি, কৈশরের ইচ্ছাটিই তুলে ধরেছি কালো অক্ষরে। ইচ্ছা হত পুর্নিমা রাতে বড় দুই মালাইয়া নৌকায় চড়ে ছাউনির উপর বসে চন্দ্রের স্নিগ্ধতা দেখবো। চন্দ্রের আলোতে ঝিলমিল পানির কলোতান শুনবো লহড়ির সুরে। বয়সের কারনে পরিবারের অনুমতি মিলেনি, আর্থিক সঙ্গতিটিও ছিল অপ্রতুল্য। মনের ইচ্ছাটি অপূর্ন থেকে গেছে হৃদয়ের গহীনে।
সময়ের বিবর্তনে দুটোই বদলেছে কিন্তু, বুড়িগঙ্গা হারিয়েছে চিত্রটি। পাল তোল নৌকা বিলুপ্ত হয়ে গেছে আর জল হয়েছে বিষাক্ত। স্বচ্ছ পানি এখন আলকাতরার রঙ ধারন করেছে। দুর্গন্ধে মূখে রোমাল চেপে পারাপার হতে হয়। নৌযানের মলমূত্র সহ সকল আবর্জনা নিক্ষিপ্ত হয় বুড়িগঙ্গায়। শহরের খালগুলি ভরাট হয়ে গেছে আবর্জনায়। নদী সংলগ্ন বসতবাড়ীর ড্রেনের লক্ষ্য বুড়িগঙ্গা সেখানেই স্তুপ হয় গলীত পঁচা সব। যে নদীর জলে স্নাত হয়ে পবিত্র হত মানূষ। এখন এক গ্লাস জলেই নির্ঘাত মৃত্যু হবে সুস্থ্য মানুষের। মৎস প্রানী অক্কা পেয়েছে আগেই। বুড়িগঙ্গার মাছ এখন রোগের জন্ম দেয়, হাসপাতালে ভিড় জমায় মানুষেরা। চার পাশে নদী বেষ্টিত এমন শহর পৃথিবীর কোথায়ও নেই। বালু নদী বিলুপ্ত, তুরাগ অভিন্ন চিত্র শীতলক্ষার অবস্থাটিও দুষন গঁন্ধে নিশ্চল। প্রকৃতির সাথে এমন নির্দয় আচরন সত্যি দুঃখজনক।
অবস্থাটির পরিবর্তন করা সম্ভব। প্রযুক্তি বিবর্তন এনেছে বিশ্বময়। জার্মানীর রাই নদী বদলেছে, চীনের হোয়াং হো এখন বিস্ময় পৃথিবীর। উদ্যোগ নিলে বুড়িগঙ্গাও স্বচল হতে পারে। ফিরে পেতে পারে বালু, তুরাগ আর শীতলক্ষা নদীর পুর্বাবস্থাটি। এমনটি হলে রাজধানী ঢাকা শহর বদলে যাবে। দৃষ্টি নন্দন নদীগুলি হবে পর্যটকদের আকর্ষন। রাজস্ব উৎপাদন ছাড়াও মৎস শিল্প ঢাকার বাজারে সয়লাব হবে। বিষুদ্ধ পানিও সরবরাহ হবে এই নদী থেকেই। পত্রিকায় লেখা ছাপা হয় প্রায়ই। নদী সংস্কারের কথাও আসে এসব লেখায় কিন্তু, উদ্যোগ নেয়নি কোন সরকারই। পদ্মা সেতু নির্মান করাও ছিল অবাস্তব কল্পনা। বর্তমান সরকার সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। দেশ এখন অর্থনৈতিকভাবেও বদলেছে। বহু জনকল্যানমুলক প্রকল্প সরকার সুষ্ঠ ভাবেই বাস্তবায়ন করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় মেগা প্রকল্প এখনো চলমান। রাজধানীর চার পাশের নদী গুলি সংস্কার করাও এখন অতীব জরুরী। সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রনালয় এবং কর্ত্তাব্যক্তিদের কাছে বিনীত আবেদন ভাবে নিদীগুলি সংস্কারের দাবী জানাই।