বি এন পি মহাসচীব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনে মানুষের আস্থা উঠে গেছে। এখন কেউ ভোট দিতে চায়না। কথাটির বিশ্লেষন দরকার।
যেভাবেই হউক, ৭৫ এর পরে বি এন পি ভোটারদের একটা অংশ দখল করেছে। আওয়ামী লীগের সংগে এই সংখ্যাটির ব্যবধানও খুব বেশী নয়। সর্বোচ্চ ২% থেকে ৪% হবে হয়ত। জামাতেরও একটি ভোট ব্যংক রয়েছে যারা, কখনোই নৌকায় ভোট দিবেনা। এছাড়াও ভোটারদের একটি বড় অংশ কোন দলকেই সমর্থন করেনা,ভোট দেয় প্রার্থী দেখে। এই ভোটরদের আকর্ষন করতেই প্রচারনা চালাতে হয় নির্বাচনে। ফলাফল নির্ভর করে এই ভোটারদের উপরই। এই হিসাবটি মাথায় রেখেই জোট গঠন করতে হয়েছে। ছোট ছোট দলগুলির কম ভোট হলেও একত্রে মিলে জামাতের সংখ্যাটি কাটাকাটি হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের রিজার্ভ ভোট ২% বেশী হলেও আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে যায় জোটের কারনে। রাজনীতির এই খেলায় বি এন পিও পিছিয়ে নেই, তারাও জোট করেছে জামাতের সংগে। আরও দল আছে কিন্তু ভোট আছে কেবল জামাতেরই। বাকিরা কেউ ভোট আনতে পারবেনা। বি এন পি নির্বাচন বর্জন করায়, বি এন পি আর জামাতের ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যায়না। বি এন পি- জামাতের সংখ্যাটা ভোট কেন্দ্রে না গেলে উপস্থিতি দেখা যাবে কিভাবে। ফলাফলটিও জানা হয়ে যায়। নিরপেক্ষ অংশটিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এমন অবস্থার জন্য বি এন পি এবং তাদের জোটই দায়ী, নির্বাচন কমিশন নয়। এই অভিযোগে রাজনৈতিক আন্দোলনও সঠিক নয়।
দ্বিতীয় কথাঃ
ইউরোপ এমেরিকাতেও ভোটারের উপস্থিতি এখন ৬০ শতাংশ পৌঁছায়না। ৪০% বা আরো বেশী ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রেই যায়না। এখানে নির্বাচন কমিশন নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনা। একমাত্র অষ্ট্রেলিয়া ছাড়া বিশ্বের কোন দেশেই ভোট দেওয়া বাধ্যতামুলক নয়। অষ্ট্রেলিয়াতে ভোট না দিলে জরিমানা গুনতে হয়। উন্নত দেশে নির্বাচনের আগে জরিপ প্রকাশ করে। সেই জরিপ ভুল প্রমানীত হয়নি এখনো। ফলাফল জেনে যায় জরিপেই। জরিপ দেখেই ভোটাররা ভোট দেয়, নীজের ভোটটি কাজে লাগিয়ে তৃপ্ত হয়। নিরপেক্ষ ভোটার নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারন করে সব দেশেই। রাজনৈতিক ভাবে উদ্ভুদ্ধ হয়ে ভোট দেয় শুধু দলের নেতা-কর্মী আর সমর্থকরা। বিশ্ব জুড়ে গনতন্ত্র চর্চার দাবী উঠলেও গনতন্ত্রই সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থাটি নয়। তবে এর চেয়ে ভাল পন্থাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি এখনো। গনতন্ত্রের বৃহত্তম রাষ্ট্র প্রতিবেশী ভারতের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতিও ৬০% শতাংশ পার হয়না সবখানে। গত দুটি নির্বাচনে ভারতে নির্বাচনি সংঘাত হয়েছে বাংলাদেশের দ্বিগুন। ভারতের নির্বাচনেও ভোটারের অনুপস্থিতি কি নির্বাচন কমিশনের ব্যার্থতা?
বি এন পি মহাসচিব নির্বাচনের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে কথা বলেছেন। আসলে বি এন পি নির্বাচনই চায়না। তারা চায় সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতায় বসতে। সেই লক্ষ্যে আগুন সন্ত্রাস করে ৫০০ মানূষকে হত্যা করেছে বি এন পি। হেফাজতীদের দিয়ে আন্দোলন করিয়েছে, উষ্কে দিয়েছে মৌলবাদ আর জংগিদের। বংগবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তাদের সংগে খেলেছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায়, জয়ী হয়েছেন। ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা দখল করেননি। বি এন পি এখন নিঃস্ব হয়ে পরেছে রাজনৈতিক ভাবে। হিসাবটি অনুকুলে নয় সে কথা ফখরুল সাহেবরাও জানেন। অস্তিত্ব রক্ষায় নির্বাচন কমিশনের কথা বলে দলের ব্যর্থতাটি ঢাকার চেষ্টা করছেন কৌশলে।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
টরেন্টো, কানাডা
৩০ আগষ্ট ২০২০।