অসম্ভবকে সম্ভব করাই যে পরিবারের বৈশিষ্ট্য সে পরিবারটি বারবার কল্পনাকে হার মানাবে এটাই স্বাভাবিক। জীবন বাজি রেখে যিনি পরিবার পরিজন, আত্মীয়স্বজন সকলকে দূরে ঠেলে “বাংলাদেশ” সৃষ্টিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সেই মহামানব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সবাই বুঝিয়েছিলেন এটা অসম্ভব। কিন্তু নাছোড়বান্দা মুজিব বাংলাদেশ অর্জন করে দেখিয়ে দিলেন তিনি শুধু স্বপ্ন দেখেননা, বাস্তবায়নও করেন। মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য প্রাপ্ত দেশকে গড়ে সোনার বাংলা তৈরির স্বপ্নে যখন বিভোর তখন পাকিস্তানি দোসর ও তাদের রেখে যাওয়া আশীর্বাদপুষ্ট ঘাতক চক্র বাংলাদেশকে সোনার বাংলা গড়তে এই মহান বিশ্বনেতাকে সুযোগ দেননি। হত্যার মাধ্যমে কলঙ্কিত করেছে পুরো জাতিকে।
কিন্তু তার কন্যা বাংলাদেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার অসমাপ্ত স্বপ্নগুলোকে একটির পর একটি বাস্তবায়ন করে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন।
দেশি-বিদেশি চক্রান্ত উপেক্ষা করে, সহস্র প্রতিবন্ধকতা ছিন্ন করে বিশ্ববিস্ময় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে পিতার মতো বীরত্বের স্বাক্ষর রাখলেন।
তিনি বিশ্বব্যাংককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রচণ্ড একটা চপেটাঘাত বসিয়ে ড. ইউনূস এবং খালেদা জিয়ার মুখে চুনকালি দিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে বসলো শেষ (৪১তম) স্প্যান। তিনি শেষ স্প্যান বসানোর মাধ্যমে একটি বিশাল বিচ্ছিন্ন বিশাল জনগোষ্ঠীকে পুরো বাংলাদেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করলেন।
স্মরণ করুন একাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এ দেশটি স্বাধীন করেছিলেন। তখন তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার সদ্যস্বাধীন যে দেশটিকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে কৌতুক করেছিলেন, সে দেশটি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যাবে তা কিছুতেই মানতে নারাজ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার এদেশীয় কুচক্রী মহল।শুরু হলো ষড়যন্ত্রের জাল বোনা। মার্কিন নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু নির্মাণ বন্ধের জন্য মরিয়া হয়ে দুর্নীতি প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে উঠলো।জুটে গেল ওদের ফেলে দেওয়া হাড্ডি চিবানো কিছু সুশীল ও জামায়াত-বিএনপি প্রভাবিত প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার একাংশ।
‘পদ্মাসেতুতে কোন দুর্নীতি হয়নি ’সরকারের এই সাহসী বক্তব্যের পর বিশ্বব্যাংক বিচলিত হয়ে তাদের অভিযোগ প্রমাণের জন্য ঋণচুক্তি বাতিল করে এবং কানাডার আদালতে মামলা দায়ের করে। চেষ্টা করে দূর্নীতি হয়েছে এমন প্রমাণ করার।
৪ জন হুইসেল ব্লোয়ারস, অসংখ্য ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো তথ্য, বাংলাদেশের পত্রিকার কিছু কাটিং, রমেশ বাবুর কথিত নোট প্যাড, আড়িপাতা টেলিফোন রেকর্ড সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে উপস্থাপিত হয়। এছাড়াও আরও ভুয়া কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
বিচারক বলেন, শোনা কথা ও গুজবের ওপর এ মামলা রুজু হয়েছে। এর কোনো ভিত্তি নেই। সবগুলো তথ্যই সবার জানা। শোনা কথা ও গুজব যা দুর্নীতি প্রমাণে প্রাসঙ্গিক নয়। এ বিবেচনায় টরেন্টোর সুপিরিয়র কোর্ট পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলা খারিজ করে দেয়।’ বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়।জনগণ খুশি হয় কিন্তু খালেদা জিয়া খুশি হতে পারেননি।তিনি বললেন, ‘জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু নির্মাণ হচ্ছে, আপনারা পদ্মাসেতুতে উঠবেন না ‘।
বিশ্ব ব্যাংকের নেতিবাচক কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটি বিভাগকে বলেছিলেন ‘রাবিশ’ এবং‘অপদার্থ’ এবং বিশ্বব্যাংকও স্বীকার করে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করার সিদ্ধান্তটি ছিল ভুল। কিন্তু ড. ইউনূস ও খালেদা জিয়া এখনও তাদের ভুল স্বীকার করেননি।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে নিজ অর্থায়নে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণ ২ বছর পিছিয়েছে, ব্যয় বেড়েছে অনেক।অবশেষে আজ সর্বশেষ ৪১তম প্যান বসিয়ে বিজয়ের মাসে বাংলাদেশ তার সক্ষমতা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরলো। এ হলো মুজিব শতবর্ষের সেরা উপহার।
প্রদীপ কুমার দেবনাথ,
শিক্ষক, গণমাধ্যম কর্মী ও কলামিস্ট।
[বি. দ্রঃ মুক্তমতামতের জন্য সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী নন।]