কোন দেশের জিডিপি বলতে বোঝায়, একটি দেশের অভ্যন্তরে দেশি ও বিদেশি নাগরিকদের প্রতিবছর উৎপাদিত সব দ্রব্য ও সেবার মোট আর্থিক মূল্য। আর গতবছর (২০১৯) অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেয়া ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক ডাটাবেজ’এ বলা হয়েছে, শীর্ষ অর্থনীতির ১০টি দেশের হাতেই আছে বিশ্বের মোট অর্থনীতির ৬৬ ভাগ, আর শীর্ষ ২০ দেশ মিলে দখলে রেখেছে ৭৯ শতাংশ।
অন্যদিকে, বিশ্ব অর্থনীতির মাত্র ২১ শতাংশ ভাগাভাগি করেছে ১৭৩টি দেশ। নমিনাল ও পিপিপি হিসাবে বিশ্বের শীর্ষ ১০ অর্থনীতির দেশের কার জিডিপি কত?
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রঃ দেড়শ বছর ধরে শীর্ষ অর্থনীতির ১ম স্থান দখলে রেখেছে ৫০ অঙ্গরাজ্যের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৮৭১ সাল থেকেই মার্কিন অর্থনীতিই বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি।
২০১৮ সালে দেশটির জিডিপি’র আকার ছিল ২০.৫৮ ট্রিলিয়ন ডলার। বর্তমান আকার ২১.৪৪ ট্রিলিয়ন ডলার।
বলা হচ্ছে, চলতি বছরের মধ্যেই এর আকার দাঁড়াবে ২২.৩২ ট্রিলিয়ন ডলারে। তবে, এই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল করোনা মহামারীর আগে। ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতেও (পিপিপি) মার্কিন অর্থনীতির আকার একই।
২. চীনঃ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীনের বর্তমান জিডিপির আকার ১৪.১৪ ট্রিলিয়ন ডলার। চীনকে বলা হয় ‘পৃথিবীর কারখানা’। ১৯৮০ সালে দেশটি ৩০৫.৩৫ বিলিয়ন ডলার নমিনাল জিডিপি নিয়ে শীর্ষ অর্থনীতির দেশের তালিকায় ৭ নম্বরে ছিল। ওই সময় মার্কিন জিডিপির আকার ছিল ২.৮৬ ট্রিলিয়ন ডলার।
আইএমএফ’র তথ্য, ২০১৮ সালে চীনের জিডিপি ছিল ১৩.৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার; যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ৭.২১ ট্রিলিয়ন ডলার কম ছিল। গতবছর দেয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল চলতি বছর এই ব্যবধানে নেমে আসবে ৭.০৫ ট্রিলিয়নে আর ২০২৩ সালে দুই দেশের জিডিপির ব্যবধান নেমে আসবে ৫.৪৭ ট্রিলিয়ন ডলারে।
নমিনাল হিসেবে চীনের জিডিপি’র আকার ২য় শীর্ষ হলেও ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) চীনই শীর্ষ অর্থনীতির দেশ। এই হিসাবে দেশটির জিডিপির আকার ২৫.২৭ ট্রিলিয়ন ডলার। বলা হয়েছিল, পিপিপি’র হিসাবে ২০২৩ সালে চীনের জিডিপি দাঁড়াবে ৩৬.৯৯ ট্রিলিয়ন ডলারে।
৩. জাপানঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা সামলে বর্তমানে বেশ গোছালো অর্থনীতির দেশ জাপান। সূর্যদয়ের এই দেশটির নমিনাল জিডিপি ৫.১৫ ট্রিলিয়ন ডলার আর ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে এর পরিমাণ ৫.৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার। গত বছরই (২০১৯) দেশটি ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি মাইলফলক স্পর্শ করে।
৪. জার্মানিঃ বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশ জার্মানির নমিনাল জিডিপি ৩.৮৬ ট্রিলিয়ন ডলার আর ক্ষয় ক্ষমতার ভিত্তিতে জিডিপির আকার ৪.৪৪ ট্রিলিয়ন ডলার। ইউরোপের মধ্যে এই দেশের অর্থনীতির আকারই সবচেয়ে বড়।
১৯৮০ সালে ৮৫০.৪৭ বিলিয়ন নমিনাল জিডিপি নিয়ে ৩য় শীর্ষ স্থানে ছিল দেশটি। ২০১৬ সালে জার্মানির জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.২ শতাংশ আর ২০১৭ সালে হয়েছে ২.৫ শতাংশ।
৫. ভারতঃ ভারতের নমিনাল জিডিপির আকার ২.৯৪ ট্রিলিয়ন ডলার আর ক্ষয় ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) এর পরিমাণ ১০.৫১ ট্রিলিয়ন। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে টপকে গত বছর (২০১৯) ৫ম স্থানে উঠে আসে ২৮ প্রদেশের এই দেশ।
৬. যুক্তরাজ্যঃ দেশটির নমিনাল জিডিপির আকার ২.৮৩ ট্রিলিয়ন ডলার আর পিপিপি ভিত্তিতে এর পরিমাণ ৩.০৪ ট্রিলিয়ন ডলার। দেশটির সেবা খাতই এর জিডিপির ৭৫ ভাগের যোগান দেয়।
৭. ফ্রান্সঃ ফ্রান্সের নমিনাল জিডিপির আকার ২.৭১ ট্রিলিয়ন ডলার আর পিপিপিতে এর পরিমাণ ২.৯৬ ট্রিলিয়ন ডলার। বেকার সমস্যা দেশটিতে বেশ প্রকট।
বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ সালে দেশটিতে কর্মসংস্থানের বাইরে ছিল ১০ শতাংশ মানুষ। ২০১৭ সালে এই হার কিছুটা কমে এসে দাঁড়ায় ৯.৬৮ শতাংশে। পর্যটন ফ্রান্সের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে।
কৃষিপণ্য উৎপাদনেও ইউরোপে এগিয়ে এই দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের এক তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে আইফেল টাওয়ারের এই দেশ। কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে ৬ষ্ঠ স্থান ফ্রান্সের আর এসব পণ্য রপ্তানিতে দেশটির অবস্থান ২য়।
৮. ইতালিঃ দেশটির নমিনাল জিডিপি ১.৯৯ ট্রিলিয়ন ডলার হলেও পিপিপি’তে এর আকার ২.৪০ ট্রিলিয়ন ডলার। গত বছরের পূর্বাভাস, ২০২৩ সালে দেশটির নমিনাল জিডিপি বেড়ে দাঁড়াবে ২.২৬ ট্রিলিয়ন ডলারে।
৯. ব্রাজিলঃ দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশের নমিনাল জিডিপির আকার ১.৮৫ ট্রিলিয়ন ডলার আর পিপিপিতে ৩.৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার। রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে দেশটির ব্রিকস সদস্য।
১০. কানাডাঃ কানাডার নমিনাল জিডিপি ১.৭৩ ট্রিলিয়ন ডলার আর পিপিপিতে এর পরিমাণ ১.৮৪ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালে রাশিয়াকে পেছনে ফেলে শীর্ষ অর্থনীতির ১০ম স্থানে উঠে আসে দেশটি। ২০২৩ সালে দেশটির নমিনাল জিডিপি ২.১৩ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।
এর পরের ১০টি দেশ যথাক্রমে রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, নেদারল্যান্ড, সৌদি আরব, তুরস্ক, ও সুইজারল্যান্ড।
প্রসঙ্গত, জেনে রাখুনঃ এক ট্রিলিয়ন = এক লাখ কোটি, এক বিলিয়ন = ১শ’ কোটি, এক মিলিয়ন = ১০ লাখ।