মিঠাপানির বিষমুক্ত পাবনার সুস্বাদু শুঁটকি দেশের বাজার ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্তত ২০ দেশে রফতানি হচ্ছে। এরই মধ্যে পাবনায় চলনবিল, গাজনা বিলসহ বিভিন্ন বিল এলাকার ৩ শতাধিক চাতালে চলতি মৌসুমে ১৫০ মেট্রিক টন এর বেশি শুঁটকি প্রস্তুত হচ্ছে। এর বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এসব চাতালে ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও পুরুষ-নারী শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার লোকের মৌসুমি কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে সুষ্ঠু সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে অনেক শুঁটকি নষ্ট হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ভৌগোলিক কারণেই এ অঞ্চলে ব্যাপক হারে মৎস্যজীবীদের বসতি গড়ে উঠেছে। তারা সারা বছর এসব এলাকার জলাশয় বা পুকুর থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ অঞ্চলের বড় বড় জলাশয়ের ধারে গড়ে উঠেছে শুঁটকি তৈরির চাতাল। ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত চলে শুঁটকি প্রক্রিয়ার কাজ। সকাল থেকে রাত অবধি মাছ কেনা, ধোয়া, চাতালে শুকানো ও বাছাই করে পৃথক করার কাজ চলে চাতালে। এলাকার শত-শত নারী ও পুরুষ শ্রমিক এ কাজের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে বিলগুলোতে উৎপাদিত মাছ থেকে চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পাবনায় ১৫৬ টন শুঁটকির উৎপাদন হয়েছিল। উৎপাদিত শুঁটকির বেশির ভাগই ভারতে রফতানি হয়েছে। এবার ১৬০ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
পাবনা জেলায় সবচেয়ে বেশি শুঁটকি উৎপাদন হয় সাঁথিয়া, বেড়া, সুজানগর, চাটমোহর ও ফরিদপুর উপজেলায়। এসব উপজেলায় চলনবিল, গাজনার বিলসহ ছোট-বড় বেশ কটি বিল রয়েছে। এসব বিলের মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু। এ কারণে ভারতে পাবনার শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পাবনার মানুষ শুঁটকি খেতে তেমন পছন্দ করেন না, তাই জেলায় উৎপাদিত শুঁটকির ৯০ ভাগের বেশি ভারতসহ কয়েকটি দেশে রফতানি হয়। শুঁটকি রফতানি সামনে রেখে জেলায় শুঁটকির উৎপাদন বাড়ছে।
চলতি বছর চলনবিল ও গাজনা বিল পাড়ে গড়ে উঠেছে তিন শতাধিক অস্থায়ী শুঁটকির চাতাল। চাটমোহর উপজেলার চলনবিল এলাকার বোয়াইলমারী ব্রিজ সংলগ্ন চাতাল, সুজানগরে গাজনা বিলপাড়ে চরদুলাই, সাঁথিয়ার সাতানীর চর, আরাজী গোপিনাথপুর, হুইখালী,কলাগাছি, রঘুনাথপুর জেলে, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা মাছ কেনা বা শুকানোর কাজ করে। বেড়ার জয়নগর, হরিরামপুর, কৈতলা; সাঁথিয়ার পারকরমজা, পুণ্ডুরিয়া, শামুকজানি, ঘুঘুদহ, বড়গ্রামসহ সাত-আটটি শুঁটকিখোলা ঘুরে ব্যাপক কর্মব্যস্ততা চলছে। একেকটি চাতালে গড়ে ১০ জন নারী-পুরুষ কাজ করেন। সে হিসেবে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের মৌসুমি কর্মসংস্থান হয়েছে এভাবে। নারী-পুরুষ সদস্যরা দিন হাজিরায় কাজ করছেন শুঁটকি চাতালে। তবে সেখানে কর্মরত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী।
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, চলনবিল ও গাজনা বিলসহ পাবনার অন্যান্য বিলের শুঁটকি কোনো রকম রাসায়নিকের প্রয়োগ ছাড়াই প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ফলে এ শুঁটকি স্বাস্থ্যসম্মত। চাষিদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ দিয়ে আধুনিক উপায়ে শুঁটকি তৈরি ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আজ ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৮:২৫ | বৃহস্পতিবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি