লাসিথ মালিঙ্গা যখন নিজের দশ ওভারের কোটা শেষ করলেন তখন, সতীর্থদের অনেকেই এসে পিঠ চাপড়ে সাবাসি দিয়ে গেলেন। নিজের গোল টুপিটা পরতে পরতে মালিঙ্গা যখন ফিল্ডিং করার জন্য হেটে যাচ্ছিলেন তখন সতীর্থদের সাবাসির জবাবে হয়তো মনে মনে বলছিলেন, আমার কাজতো বাপু করে দিয়েছি। বাকিটা তোমরা করো। বাকিটাও তিনিই করে যেতেন। কিন্তু শেষ উইকেটে খেলতে থাকা বেন স্টোকসের ক্যাচ ছেড়ে দিয়ে অপূর্ণতা রেখে দিলেন কুশাল মেন্ডিস। আর না হলে ৪৫তম ওভারের পঞ্চম বলেই ইংলিশদের খেল খতম হয়ে যেতো। বাকি কাজ ঠিকঠাকই করেছেন উদানা প্রদীপরা। মামুলি পুঁজি নিয়েও যেভাবে বল করেছেন তা উদাহরণ হয়েই থাকলো।
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে সবচেয়ে ফেবারিট ইংল্যান্ড। অপরদিকে নড়বড়ে শ্রীলঙ্কা। খেলার শুরুর আগে খুব কম লোকই লঙ্কানদের পক্ষে বাজি ধরেছিলেন। লিডসে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার পাড় সমর্থকও হয়তো আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
মাত্র ২৩৩ রানের টার্গেট পরাক্রমশালী ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপ কত দ্রুত টপকে যায় সেটাই হয়তো দেখতে চেয়েছিলেন দর্শকরা। কিন্তু, মনে মনে পরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছিলেন ‘বুড়ো’ মালিঙ্গা। বিশ্বকাপের পরেই ওয়ানডে ছেড়ে দিতে পারেন। তাই হয়তো গধুলীর মতো রঙিন ৩৫ বছর বয়সী মালিঙ্গা। ইংলিশ ইনিংসের শুরুতেই আঘাত হানেন। ফেরান দুই ওপেনার জেমস ভিন্স এবং জনি বেয়ারস্টোকে। মাঝখানে অধিনায়ক ইয়ন মরগারনকে কট এন্ড বোল্ড করে ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলেন ইসুরু উদানা। ৫৭ রান করা জো রুটকে ফিরিয়ে সেই চাপ আরো বাড়িয়ে দেন মালিঙ্গা। যে চাপ পরে আর সামলে উঠতে পারেনি স্বাগতিকরা।
ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে আলো ছড়িয়েছেন বেন স্টোকস। সবাই চলে গেলেও শেষ উইকেটে স্ট্রাইক ধরে রেখে দলকে জেতার স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু মার্ক উড তাকে সঙ্গ দিয়ে যেতে পারলেন না। নুয়ান প্রদীপের বলে কুশাল পেরেরার হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটনটাই ঘটে গেলো। ইংল্যান্ড হেরে গেলো ২০ রানে।
তবে খেলার শেষদিকে এসে আরেকটি নাম হয়তো ভুলে গেছেন দর্শকরা। সেটি হল অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। একের পর ব্যাটসম্যঅনদের পতন, চরম ব্যাটিং বিপর্যয়। মার্ক উড, আর্চার, ওকস, আদিল রশিদের তাণ্ডবে যখন লঙ্কান শিবির লন্ডভন্ড তখন একা হাতে লড়েছেন অভিজ্ঞ ম্যাথিউস। দলের ২৩২ রানের তার অবদা ৮৫। কিন্তু শুধু রানেই নয়, উইকেট ধরে রেখে পুরো ৫০ ওভার খেলেছেন। যেটা ইংল্যান্ডও করতে পারেনি।
উইকেট ধরে রেখে ধীর গতিতে রান তুলছিলেন তারা। তাদের ৭১ রানের জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ। ৪৬ রানে সাজঘরে ফেরেন মেন্ডিস। ক্রিজে এসে প্রথম বলেই বিদায় হন জীবন মেন্ডিস। চাপে থাকা শ্রীলঙ্কা দ্রুত সময়ের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে আরো বিপদে পড়ে যায়। ম্যাথিউস একপাশ আগলে রাখলেও রানের চাকা ছিল ধীর গতির। ২৯ রানে ধনঞ্জয় ফেরার পর থিসারা পেরেরা করেন মত্র ২। ম্যাথিউস অপরাজিত থাকেন ৮৫ রানে।
বল হাতে তিনটি করে উইকেট তুলে নেন জোফরে আর্চার এবং মার্ক উড। এছাড়া আদিল রশিদ ২টি এবং ক্রিস ওকস তুলে নেন ১টি উইকেট।
স্কোর
শ্রীলঙ্কা ২৩২/৯ (৫০)
দিমুথ করুনারত্নে ১ (৮)
কুশাল পেরেরা ২ (৬)
অভিষ্কা ফার্নান্ডো ৪৯ (৩৯)
কুশাল মেন্ডিস ৪৬ (৬৮)
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ৮৫* (১১৫)
জীবন মেন্ডিস ০ (১)
ধনঞ্জয় ডি সিলভা ২৯ (৪৭)
থিসারা পেরেরা ২ (৬)
ইসুরু উদানা ৬ (৪)
লাসিথ মালিঙ্গা ১ (৫)
নুয়ান প্রদীপ ১* (১)
বোলার
ক্রিস ওকস ৫-০-২২-১
জোফরে আর্চার ১০-২-৫২-৩
মার্ক উড ৮-০-৪০-৩
বেন স্টোকস ৫-০-১৬-০
মইন আলী ১০-০-৪০-০
আদিল রশিদ ১০-০-৪৫-২
জো রুট ২-০-১৩-০
ইংল্যান্ড ২১২/১০ (৪৭)
জেমস ভিন্স ১৪ (১৮)
জনি বেয়ারস্টো ০ (১)
জো রুট ৫৭ (৮৯)
ইয়ন মরগান ২১ (৩৫)
বেন স্টোকস ৮২* (৮৯)
জস বাটলার ১০ (৯)
মইন আলী ১৬ (২০)
ক্রিস ওকস ২ (৪)
আদিল রশিদ ১ (২)
জোফরে আর্চার ৩ (১১)
মার্ক উড ০ (৪)
বোলার
লাসিথ মালিঙ্গা ১০-১-৪৩-৪
নুয়ান প্রদীপ ১০-১-৩৮-১
ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৮-০-৩২-৩
থিসারা পেরেরা ৮-০-৩৪-০
ইসুরু উদানা ৮-০-৪১-২
জীবন মেন্ডিস ৩-০-২৩-০
শ্রীলঙ্কা ২০ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা মালিঙ্গা।