তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: মাঝারি আকৃতির জলের পাখি ডাহুক। ডাহুক খুব সতর্ক পাখি। আত্মগোপনে পারদর্শী। এই পাখিটি খুব ভীরু বলেই সুন্দর এত? পুকুর, খাল, জলাভূমি, বিল, নদীর পাড়ের গর্ত তাদের বসবাসের জন্য প্রিয় স্থান। তবে দ্রুত নগর বিস্তৃতির ফলে হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দর এই পাখি।
দুই দশক আগেও মৌলভীবাজার জেলার হাওর-বাওর, খাল, বিল-ঝিল, ডোবা, নালা-দীঘির পাশের ঝোপঝাড়ে দল বেঁধে বাস করতো ডাহুক পাখি।গ্রামাঞ্চলের পুকুর পাড়ের ঝোপঝাড়ে সন্ধ্যেবেলা ডাহুকের ডাক শোনা যেত। গভীর রাতেও ডাহুকের ডাকে অনেকের ঘুম ভাঙতো। তবে আজকাল আর ডাহুকের কণ্ঠ শোনা যায় না। একসময় বর্ষা ও শরতে ডাহুকরা বাড়ির গৃহপালিত হাঁস মুরগির সঙ্গে বেড়াতো। এখন আর তাদের আনাগোনা চোঁখে পড়ে না, তেমন দেখা পড়ে না। ডাহুক পাখি এখন হারিয়ে যেতে শুরু করেছে।
বর্ষাকাল এদের প্রজনন ঋতু। এসময় তারা বাসা করে পানির কাছেই ঝোপ ঝাড়ের ভেতরে অথবা ছোট গাছের ঝোপযুক্ত ডালে। নিরাপত্তা ঠিকঠাক থাকলে মাটিতেও বাসা করে এই পাখি। ৫-৭টি ডিম পাড়ে এরা, ডিমের রং ফিঁকে হলুদ বা গোলাপি মেশানো সাদা। ডাহুক-ডাহুকি দু’জন মিলেই ডিমে তা দেয়। বাচ্চার রং সব সময় হয় কালো। ডিম ফোটে প্রায় ২১-২৪ দিনে। আর ২৪-৩০ ঘণ্টা পরই বাচ্চারা বাসা ছাড়ে।
মাস তিনেক পরে বাচ্চারা আলাদা জীবন বেঁচে নেয়। প্রজননের সময় একটি পুরুষ ডাহুক অন্য একটি পুরুষ ডাহুককে সহ্য করতে পারে না। দেখলেই তারা মারামারি করে। এই পাখি লড়াকু প্রকৃতির। ডাহুকের প্রিয় খাদ্য জলজ পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ। এছাড়াও শাপলা-পদ্ম ফুলের নরম অংশ, কচি পানিফল, জলজ শেওলা, লতাগুল্মের নরম অংশ, ধান, কাউন, ডাল, সরিষা, শামুক, কেঁচো, জোঁক, মাছ, ছোট মাছ, শাকসবজি ও ফল খেয়ে থাকে।
পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত, প্রায় ৮৩ লাখ ৪০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাসস্থল। তবে বর্তমানে তাদের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। খাদ্য সংকট ও প্রজননকালীন সময়ে শিকারীদের উৎপাতসহ নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব এ প্রজাতির পাখি। শিকারিদের হাত থেকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা পাচ্ছে না গভীর বনজঙ্গলে বসবাসকারী ডাহুকগুলো।
সম্প্রতি আই.ইউ.সি.এন এই প্রজাতিটিকে নুন্যতম বিপদগ্রস্থ বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে ২০১২ সালে এ প্রজাতিটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত ধংশ করা হচ্ছে এদের আবাসস্থল। শিকারের কারণে বিলুপ্ত প্রায় এই ডাহুক পাখি। ডাহুক পাখি (বৈজ্ঞানিক নাম: Amaurornis phoenicurus) গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোডে চোঁখে পড়ে পাখিটি ছটফট করতে দেখে এগিয়ে গিয়ে উদ্ধার করি নিজেই। উদ্ধার এরপর সযত্নে পাখিটি রাখি এবং বুঝতে পারি বৈদ্যুতিক তারের সাথে শক লেগে পড়ে যায়। পাখিটির ২ দিন দেখা শুনা করে।
গেল বুধবার (৩ নভেম্বর) রাতে Stand For Our Endangered Wildlife (S E W) সোহেল শ্যাম ও খোকন থৌনাউজম সংগঠনের ফাউন্ডার বন্য প্রাণী সংরক্ষণ করে এই সংগঠনটি। সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক সোহেল শ্যাম’কে সংবাদদাতা আমি নিজে ফোন করে খবর দিলে ডাহুক পাখিটি সংগঠনের নিকট হস্তান্তর করি।
পরে বৃহস্পতিবার (৪ ঠা নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও বন্য প্রাণী গবেষক আমিনুর রহমানের উপস্থিতিতে ও সাথে ছিলেন Stand For Our Endangered Wildlife (S E W) সোহেল শ্যাম ও খোকন থৌনাউজম বিকেলে সবুজ বাগ এলাকায় হাওড় অঞ্চলে ডাহুক পাখিটি সুস্থতার সহিত অবমুক্ত করা হয়েছে।