বি এন পি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন সরকার দাবী না মানলে রাজপথে ফয়সালা হবে। তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বি এন পি নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচন বিষয়ে সরকার কিংবা কমিশন কারো সঙ্গেই কোন প্রকার আলোচনায় বসবেনা। আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন। নির্বাচন এলেই এমন গরম বক্তব্য শোনা যায়। যুদ্ধাংভাব জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। কিন্তু ফয়সালা হয় জনগনের ভোটেই। বি এন পি নেতাদের বক্তব্য শুনে মনে হয় যেন সরকার এখনই পরে যাবে! কিন্তু দেশের মানুষ টেলিভিশনে প্রচারিত বক্তব্য কমই শোনে। নেতাদের এই গরম বক্তৃতার সঙ্গে জনগনের সম্পৃক্ততাও নেই।
পদ্মা সেতু নিয়ে বি এন পি প্রথমে দুর্নীতি অভিযোগ করেছে। এখন ফখরুল প্রশ্ন তুলেছেন প্রয়োজনীয়তা নিয়েও। সেই সেতুর উদ্বোধন দেখতে লোকের উপস্থিতই প্রমান করেছে সেতুর প্রয়োজনীয়তাটি! অন্ধ সেজে যারা দেশের উন্নয়নকে কটাক্ষ করে তারা দেশের উন্নতি চায়না। তারা চায় দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে শত্রু শক্তির কাছে দেশকে বিক্রি করে দিতে। শত্রুর অর্থে নিজেদের বিলাসী জীবনকে নিশ্চিত করতে। সেই সত্য অনুধাবন করেই জনগন বি এন পি কে প্রত্যাখ্যান করেছে। দলটি এখন জনবিচ্ছিন্ন। দেশকে শ্রীলঙ্কার অবস্থা বর্ননা করে যারা ক্ষমতা দখল করার হুমকি দেয় তারা মতলববাজ। তাদের এমন বক্তব্য দেশদ্রোহিতার সামিল এবং দন্ডনীয় অপরাধ।
স্বপ্ন দেখা দোষের নয়। সব নেতাই ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। নিজেকে যোগ্য ভাবে মনে মনে। ঘরে ফিরে সরকারের মন্ত্রীদের সাথে খোঁশগল্প করে সুবিধা নিতে। দলের পক্ষে শ্লোগান না দিলে যে কোন সময় সরে পরার ভয় তাদেরও আছে। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর নির্বাচনের চিত্রটি এখন ভিন্ন।
দক্ষিন বঙ্গের ৭৬টি আসনে আওয়ামী লীগ শক্ত অবস্থানে। এসব আসনে বি এন পি’র সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। সাংগঠনিক দুর্বলতায় কুমিল্লায় বি এন পি’র দূর্গ এখন নড়বড়ে। চট্রগ্রামের বি এন পি জামাতের হাতে বন্দী বরিশালের বি এন পি’র কোন বড় নেতা নেই। খুলনা কোন্দলে বিভক্ত। সিলেট সব সময়ই আওয়ামী লীগের ঘাটি। সিটি মেয়র ছাড়া সিলেটে এখন বি এন পি’র কোন বড় নেতা নেই। রংপুর দিনাজপুর বি এন পি / জাতীয় পার্টির আধিক্য হলেও আওয়ামী লীগ দুই জেলাতেই এখন ভাল অবস্থানে। সেখানেও অনেক আসন আওয়ামী লীগ দখল নিয়েছে। ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের দুর্গ ছিল। ৭৫ এর পরে বি এন পি এবং জাতীয় পার্টি বহু আসন দখল করে ছিল। সেই অবস্থাটিও বদলে গেছে। কিছু আসনে বি এন পি এগিয়ে থাকলেও এই জেলার বেশীর ভাগ আসন আওয়ামী লীগ পাবে। রাজশাহী কুমিল্লার মতই বিভক্ত বি এন পি।
বিভক্তি আওয়ামী লীগের মধ্যে আরও বেশী। কিন্তু পার্থক্যটি হল আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে দলে ঢোকার চেষ্টা করবে। বি এন পি’র বিদ্রোহী প্রর্থীরা দলে ফিরবেনা। সব দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থী হবে এবং সংখ্যাটিও হবে অন্য যে কোন নির্বাচনের চেয়ে বেশী। কেউ কেউ নির্বাচিতও হবে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সুবিধা নিতে ক্ষমতার সঙ্গেই থাকতে চাইবে। চরম দুরাবস্থাতেও আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। বি এন পি’র একমাত্র ভরসা জামাত। নিবন্ধন না থাকায় জামাত নির্বাচনে যেতে পারবেনা। কিন্তু জামাতের কোন ভোট নৌকার বাক্সে পরবেনা। জামাত দীর্ঘমেয়াদি দুরাভিসন্ধি নিয়ে নেমেছে প্রচুর অর্থ নিয়ে। সেই অর্থেই বি এন পি জামাতের লক্ষ্য পুরন করতে মাঠে রয়েছে। জামাত ১০ বছরের সময় পরিকল্পনা নিয়ে বি এন পি’কে রাজনীতিতে স্বক্রিয় রেখেছে। সেই অর্থেই তারেক লন্ডনে রাজকীয় জীবন কাটাচ্ছে। এই দুই দলেরই মূল ভীতি শেখ হাসিনা। তাই তারা ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছে।
জামাত মনে করে শেখ হাসিনা বিহীন আওয়ামী লীগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবে। তখন তারা মাঠে নামিবে সর্বশক্তি নিয়ে। বি এন পি’কে সাথে নিয়ে জামাত তখন শক্ত আঘাত হানবে দেশে। বিদেশী মদদও থাকবে তাদের লক্ষ্য পুরণে। তখন জামাত হবে মূল দল এবং বি এন পি হবে তাদের সতীর্থ। তারেকও আর দেশে ফিরতে পারবেনা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আগামি নির্বাচিনে আওয়ামী লীগকে ঠেকানো যাবেনা সে কথা জামাতও জানে। রাজনীতিতে টিকে থাকতেই এখন তারা বি এন পি’তে অর্থ বিনিয়োগ করছে।
ইতিমধ্যে জামাত কর্মীরা সরকারের গুরত্বপুর্ণ জায়গায় ঢুকে পরেছে। শুধু সরকারে নয় আওয়ামী লীগেও ঢুকেগেছে জামাত বি এন পি’র কির্মীরা। দেখে চেনার উপায় নেই তাদের। জামাত বি এন পি’র এই কির্মীরা অনেকে আওয়ামী লীগের নমিনেশন পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে। আর সেই জন্যই ভয়টি বি এন পি নেতাদের লাগামহীন বক্তব্য নয়। মূল সঙ্কাটি এখন জামাতের এই দুরভিসন্ধি। গোয়েন্দা সংস্থার দৃষ্টি এড়িয়েই জামাতের এই অপতৎপরতাটি সরকারী দলের নেতারা জানলে ভাল। নাহয় দেশের জন্য বিপদ আসন্ন।