ঘূণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। অনেক এলাকায় গাছ পড়ে, লাইন ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক এলাকায় আবার সতর্কতা হিসেবে বন্ধ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৪০ লাখ গ্রাহক বর্তমানে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান রোববার রাতেই সংবাদ সম্মেলন করে ‘ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির’ খবর দেন। তিনি বলেছেন, ঝড়ের মধ্যে মানুষ ‘অনেক বিপদের মধ্যে’ রয়েছে।
জানা গেছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানার পর প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। লাখ লাখ মানুষ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। বসতবিটা, ফসলের খেত, মাছের ঘের, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উপকূলের বাসিন্দাদের। মৃত্যু হয়েছে দুইজনের।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৪০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। গাছ পড়ে, লাইন ছিঁড়ে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক এলাকায় পূর্ব সতর্কতা হিসেবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) এক পরিচালক জানান, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুর্ঘটনা এড়াতে ১৪টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর বিদ্যুৎ কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়ার পরপরই যাতে দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায় সেই লক্ষ্যে প্রত্যেকটি সমিতির কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎহীন এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে- পটুয়াখালী, বাগেরহাট, ভোলা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি জেলা। পটুয়াখালীতে ছয় লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। বাগেরহাটে ৪ লাখ ৫০ হাজার ও ভোলা জেলায় ৪ লাখ ২৫ হাজার গ্রাহক এবং ৩ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক সুশান্ত রায় বলেন, জেলায় ৪ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছেন।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ঝড়ের সময় যাতে কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট না হয়, সেজন্য মাইকিং করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আমরা চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে রাখছি। যাতে করে তাদের এলাকায় বিদ্যুতের তারের ওপরে গাছ পড়লে, তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়।’
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রিমাল বা অন্য কোনো কারণে বিচ্ছিন্ন বৈদ্যুতিক লাইন যাতে কেউ স্পর্শ না করে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তার দেখলে দ্রুত নিকটবর্তী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে৷
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) খুলনা এবং বরিশাল অঞ্চলে কোনো পদ খালি থাকলে দ্রুত একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করা, বিদ্যুৎ সংযোগ যথাসময়ে বিচ্ছিন্ন করা, খুলনা এবং বরিশাল অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে বাপবিবো ও ওজোপাডিকোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি প্রয়োজনে বাতিল করা, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজগুলো ঘূর্ণিঝড় রিমালের অভিঘাত থেকে রক্ষা করা এবং ঘূর্ণিঝড় রিমাল বিষয়ক কাজে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জনবল প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত যে কোনো প্রয়োজনে ১৬৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সেন্ট্রাল কন্ট্রোলরুমের নম্বর ০১৭৯২-৬২৩৪৬৭, ০২-৮৯০০৫৭৫, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বরিশাল অঞ্চলের ০১৭১৩-৮৫০২১৮, খুলনা অঞ্চলের ০১৭১৩-৮৫০২১১, পটুয়াখালী অঞ্চলের ০১৭১৩-৮৫০২১৯-এ নম্বরগুলো সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে। তাছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রতিটি জেলায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম
