পঞ্চাশ বছর হয়ে গেল বিজয়ের। আগের দিন থেকেই বিজয়ের খবর আসছিল চারিদিক থেকে। বিভিন্ন সেক্টরে পাকিস্তানি সৈন্যের নির্মম পরজায়ের সংবাদ দিচ্ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে। আত্নসমর্পনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ড। ঢাকা তখন চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা। আমাদের এলাকাটি শত্রুমুক্ত হয়েগেছে আগেই। মুক্তিবাহিনী তখন ঢাকামূখি। আকাশে বিমানের মহড়া চলছে অবিরাম, কোন প্রতিরোধ নেই। সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনের উৎকন্ঠা বেড়েই চলেছে। প্রতিক্ষীত স্বাধীনতা কেবল সময়ের ব্যপার তখন। গ্রামগুলি তখন মানুষে পরিপুর্ন। জীবনের ভয় আর অভাবের মধ্যেও অসাধারন এক প্রাঞ্চাঞ্চল্য সর্বত্র। মাঠে ঘাটে বাজারে একটাই আলোচনা দেশ স্বাধীন হয়ে যাচ্ছে। প্রস্তুতি চলছে ঢাকা ফেরার। যারা সব ফেলে চলে গিয়েছিল গ্রামে। এই মুহুর্তটির উত্তেজনা কি এবং কেমন তা কেবল যারা স্বাধীনতা দেখেছে তারাই বলতে পারবে। বিকেল তিনটায় বাংলাদেশ বেতার ধারা বিবরনির মত রণক্ষেত্রের বিজয়ের খবর দিচ্ছে৷ হঠাৎ জয়বাংলা ধ্বনিতে সমগ্র বাংলাদেশ প্রকম্পিত হয়ে উঠলো। পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রান বাঁচাতে আত্নসমর্পনে বাধ্য হয়েছে। লাল সবুজের পতাকা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। আনন্দ মিছিল আর জয় বাংলা ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে। উৎফুল্ল জনতা আনন্দে অশ্রুজল ফেলেছে। বাঙালীর হাজার বছরের স্বাধীনতার সাধ পুর্ন হয়েছে এই ১৬ ই ডিসম্বরে। লাখো শহীদের আত্নবিসর্জন, মা বোনের সম্ভ্রমহানী আর অপুরনীয় ত্যগের বিনিময়ে বাঙালী তাদের স্বাধীনভুমি নিশ্চিত করেছে। ১৬ই ডিসম্বরে বিজয়ের আনন্দটি ছিল বাঙালীর জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই দিনের বিষাদটিও অন্য কোন দেশ বা মানূষের জ্ঞান বা উপলব্দি করতে পারবেনা। দেশকে স্বাধীন করতে, শত্রু মুক্ত করতে পৃথিবীর আর কোন দেশ এত রক্ত দেয়নি। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের দামে কেনা বাংলার স্বাধীনতা বাঙালীর জীবনে এক অনন্য সম্পদ। গর্ব করি বিজয়ের। অবনত চিত্তে সালাম জানাই সকল শহীদদের। আর সালাম জানাই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা। যিনি নিরব নিরস্ত্র জাতীকে একটি প্রশিক্ষিত সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি যুগিয়েছেন। তাই ৭১ এর ১৬ই ডিসম্বরের মত করেই একবার চিৎকার করে বলতে চাই জয় বাংলা।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
টরন্টো, কানাডা
১৬ ডিসম্বর ২০২০।