মোঃ সদরুল কাদির (শাওন):: দেশে বিদ্যুৎচালিত ইজি বাইক ও অন্যান্য যানবাহন প্রচুর পরিমাণে চলাচল করলেও সেগুলো বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে রেজিস্ট্রেশন পায় না। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হয়।
সারা পৃথিবীতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল বাড়ছে। কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমণ হয় না বিধায় তেলচালিত যানবাহনের তুলনায় এসব গাড়ি পরিবেশসম্মত। আর সে বিবেচনায় বিশ্বের বহু দেশেই বিদ্যুৎচালিত যানবাহনকে প্রণোদনা দেওয়া হয়। এবার এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎচালিত (ব্যাটারি) যানবাহনকে নিবন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে বিআরটিএ। শীঘ্রই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত বছর এক অনুষ্ঠানে জানান বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রচলন করা সম্ভব হলে তা দুই বিলিয়ন ডলার জ্বালানি তেল আমদানি সাশ্রয় করবে।
অতীতে বিদ্যুতের সংকটের কারণে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রচলন একটি বড় বাধা ছিল। এখন বিদ্যুৎ সংকট না থাকায় সে সমস্যাও নেই। এজন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
তাতে বলা হয়েছে, ইলেকট্রিক মোটরযান চালাতে হলে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন করতে হবে; থাকতে হবে ফিটনেস সনদ, ট্যাক্স টোকেন।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর ‘ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৮’ এর খসড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠায় বিআরটিএ। পরে গত ৬ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে একটি পর্যালোচনা সভা হয়। ওই সভায় বিভাগের সচিব মতামত দেন যে নীতিমালার খসড়ায় যেসব বিষয় বলা হয়েছে, তার বেশিরভাগই বর্তমান মোটরযান আইন ও বিধিতে আছে।
এ বিষয়ে বিআরটিএ পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী গণমাধ্যমকে বলেন, পৃথিবীর সব জায়গায় ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাপারে আগ্রহ বাড়ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও কয়েকটি ইলেকট্রিক কার এসেছে। গাড়ি যেহেতু এখানেও আসা শুরু করেছে, স্বাভাবিকভাবেই একে একটা নীতিমালার আওতায় আনতে হবে।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কমিয়ে বৈশ্বিক উঞ্চায়ন রোধ করার জন্য বিশ্বে ইঞ্জিনবিহীন মোটরযান ব্যবহারে উৎসাহ বাড়ছে। বাংলাদেশেও এ ধরনের মোটরযান ব্যবহার শুরু হয়েছে বিধায় এগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা প্রয়োজন।
এতে প্রতিদিন আড়াইশ থেকে তিনশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক (জনতথ্য) সাইফুল হাসান। তিনি বলেন, এক সময় এসব যান বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা থাকলেও তা থেকে এখন সরে এসেছেন তারা।
বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে অনুমতি ছাড়াই লাখের বেশি বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল করছে। এরমধ্যে ইজিবাইক হিসেবে পরিচিত থ্রি-হুইলারের সংখ্যাই বেশি। এদের বেশিরভাগের অবস্থাই ভালো না, খুবই হালকা। নিবন্ধন পদ্ধতিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হলে আমদানিকারকরা ভালো মানের ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলারের আমদানি বাড়বে।
ইলেকট্রিক মোটরযানের আয়ুষ্কাল ধরার কথাও বলা হয়েছে খসড়া নীতিমালায়। এক্ষেত্রে মোটরসাইকেল ১০ বছর, তিন চাকার যান নয় বছর এবং হালকা, মধ্যম ও ভারী যানবাহনের আয়ুষ্কাল ২০ বছর ধরা হয়েছে।
ইলেকট্রিক মোটরযানের নিবন্ধন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট এবং ট্যাক্সটোকেন এবং রুট পারমিট দেওয়ার প্রক্রিয়া ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের মতোই হবে বলে জানা গেছে।
খসড়া নীতিমালায় রয়েছে, অন্যান্য যানবাহনের মতোই ইলেকট্রিক মোটরযান শনাক্তের জন্য এর গায়ে বা ফ্রেমে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের খোদাই করা নির্ধারিত ডিজিটের চেসিস নম্বর, মোটর সনাক্তের জন্য মোটরের গায়ে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের খোদাই করা নির্ধারিত ডিজিটের মোটর নম্বর থাকতে হবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক সাইফুল বলেন, বিদ্যুৎচালিত গাড়ির জন্য চার্জিং স্টেশনও করা হচ্ছে। এজন্য আলাদা একটা ট্যারিফও ঠিক করা হয়েছে। ওরা যেন মানুষের বাসাবাড়ি থেকে বিদ্যুৎ না নেয়, কমার্শিয়াল যে রেট আছে, সেই রেটে ওরা চার্জ দিবে সে বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিদ্যুৎচালিত মোটরযান কীভাবে নিবন্ধন হচ্ছে, কীভাবে চলাচল করছে, তা দেখতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। এরপর বিআরটিএ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে বলে জানা গেছে।