সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, আইনজীবি পর্যন্ত মিথ্যা মামালায় হয়রানি হচ্ছে প্রতিনিয়ত জায়গা জমির বিরোধ, পারিবারিক কলহ, আর্থিক বিবাদ, হিংসা ও অনৈতিক সুবিধা আদায় থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণেই এই মিথ্যা মামলার উৎপত্তি। থানা থেকে শুরু করে আদালতে পর্যন্ত এই মিথ্যা মামলার ফাইল দিন দিন বাড়তে থাকে। আর এই মিথ্যা মামলায় বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করার জন্য সংঘবদ্ধ চক্র আদালত কিংবা থানা এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন। এই সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ হচ্ছে মোটা অংঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা মামলার বাদি, স্বাক্ষী জোগাড় করে দেওয়া, থানায় তদবীর করে চক্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পুলিশকে দিয়ে, নয়ত, আদালতে চক্রের পরিচিত আইনজীবিকে দিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করা। কোন রকমে যদি একবার একটি মামলা থানায় কিংবা আদালতে দায়ের করা যায় তাতেই ঐ চক্রের সার্থকতা বলে মনে করা হয়। কারণ দায়েরকৃত ঐ মিথ্যা মামলায় নিরীহ, নিরদোষি ব্যক্তি (আসামী) গ্রেফতার হয়ে বেশ কিছু দিন হাজত বাসের পর আদালত হইতে জামিনে মুক্ত হন। এই যে, বিনাদোষে মিথ্যা মামলায় হাজত বাস এবং হয়রানী যে কত কষ্টের বা কত দুঃখের যারা ভুক্তভুগি তারাই শুধু জানেন, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় স্বয়ং পুলিশই অনৈতিক সুবিধা আদায় থেকে বঞ্চিত হয়ে ইয়াবা, গাজা কিংবা যে কোন মিথ্যা অপবাদে মিথ্যা মামলায় হয়রানীও কম হচ্ছে না। সূত্রমতে, ২০১২ সালে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলকার খাজা রোডের এক বাসায় প্রবাসী ব্যবসায়ী মোঃ মহসিনকে আটকিয়ে রেখে কয়েকজন তরুণীকে দিয়ে ছবি তুলে ভুয়া কাবিননামা বানিয়ে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ঐ ব্যবসায়ীর নিকট হইতে মোটা অংঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একই বছরের ২৬ জুন চট্টগ্রাম আদালতে সাবেক অতিরিক্ত জেলা পিপির বিরুদ্ধে সুমি আক্তার নামের এক মহিলা ভুয়া স্ত্রী সেজে ভুয়া কাবিননামায় আদালতে মিথ্যা যৌতুকের মামলা দায়ের করেছিলেন। একই কায়দায় বেবী আকতার নামের এক নারীর মিথ্যা যৌতুকের মামলায় হয়রানীর শিকার হন এক সাংবাদিক । ঐ সাংবাদিক উল্লেখিত মিথ্যা মামলায় বেশ কিছুদিন হাজতেও ছিলেন। এই রূপ মিথ্যা মামলায় অনেকে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। জানা গেছে, সামাজিক মর্যাদা ও মান সম্মানের ভয়ে ভুক্ত ভোগীরা কোন রুপ প্রতিকার চান না। ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধীত ২০০৩) এর ৯ (৪) (খ)/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন রিমা আক্তার (২২) নামের এক মহিলা, মামলা নং- ৩০৪/১৪ , তার পিতার নাম মোঃ শুক্কুর আলী, ঠিকানা দেওয়া হয়েছে- মালীপাড়া, মনির মিয়ার কলোনী, ১ নং ঝীল, ফিরোজশাহ্, থানা-আকবরশাহ্। উক্ত মামলায় আসামী করা হয়েছে- ১) মৃদুল মজুমদার (৩৯), পিতা- মৃত সুরেশ মজুমদার, সাং উত্তর কাট্টলী, মজুমদার বাড়ি, ২) বেলায়েত হোসেন (৪০), পিতা মৃত সফি সওদাগর, সাং মোবারক ঘোনা, থানা- জোরারগন্ধ, ৩) ইলিয়াস সরকার (৩৫), পিতা- সফিকুল ইসলাম, সাং- শান্তিনগর, পশ্চিম, ষোলশহর, থানা- বায়োজিদ, বাদিনীর পক্ষে আদালতে মামলা পরিচালনা করেছিলেন এডভোকেট মাসুম চৌধুরী। পরবর্তীতে আসামীগণ উক্ত মামলার বিষয়ে জানিতে পেরে তাহারা আদালত হইতে জামিনে মুক্ত হয়ে উক্ত মামলাকে চেলেঞ্জ করেন। আসামী পক্ষের চেলেঞ্জের কারণে আদালত উক্ত মামলা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট এর নিকট তদন্তের জন্য প্রেরণ করিলে, রিমা আক্তারের দায়েরকৃত মামলা মিথ্যা বলিয়া প্রতিবেদন দায়েরের কারণে আসামীগণ আদালত হইতে উক্ত মিথ্যা মামলার দায় হইতে অব্যাহতি পান। পরবর্তীতে রিমা আক্তারের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার ১ নং আসামী মৃদুল মজুমদার বাদী হয়ে মিথ্যা মামলা দায়েরের অপরাধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ১৭/৩০ ধারায় কতিত রিমা আক্তার সহ অপরাপর আরো দুই ব্যক্তির নামে একই ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করিলে আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন, মামলা নং- ৫৩৫/২০১৬ ইং। কিন্তু উক্ত রিমা আক্তার সহ তাহার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করিলেও আজ পর্যন্ত পুলিশ আসামীদেরকে গ্রেফতার করিতে পারেন নি। আদালতে মিথ্যা মামলা দায়েরের কারণে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা ঐ মিথ্যা মামলার বাদী বা স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে বিচারের আশায় অভিযোগ দায়ের করিলেও মিথ্যা মামলার বাদী স্বাক্ষীগণ ছদ্ধ না, ভুয়া পরিচয়, ও মিথ্যা ঠিকানা ব্যবহারের ফলে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রে। আবার অনেক ভুক্ত ভোগিরা মনে করেন পুলিশের অবহেলা, গাফিলতির কারণেও প্রতারকদেরকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়না। সম্প্রতি ঢাকায় পুলিশ কর্তৃক ডেইলি অবজারভারের ফটো সাংবাদিক আশিকের পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাসানোর বিষয়ে তোলপার সৃষ্টি হয়েছে সারাদেশে। আরেক সূত্রমতে- মামলা ও তদন্ত প্রতিবেদন জাল করে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করার বিষয়ে চট্টগ্রামের সংঘবদ্ধ গ্রুপের কাউন্সিলর, আইনজীবি, আদালতের পিয়ন ও পেশকার সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ডিবির পরিদর্শক মোহাম্মদ ফজলুল করিম সেলিম সম্প্রতি একটি তদন্ত প্রতিবেদন দায়ের করেছেন বিজ্ঞ আদালতে।এই মিথ্যা মামল হইতে বাদ যাচ্ছে না ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি, সাংবাদিক আইনজীবি কেহই । ভুক্তভুগিরা মনে করেন এই মিথ্যা মামলার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করলে অনেকাংশে মিথ্যা মামলা কমে যাবে।