মো.নাছির উদ্দিন, বাঞ্ছারামপুর: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছয়ফুল্লাকান্দি মাজার প্রাঙ্গণে শুক্রবার সকাল ১১ঘটিকার সময় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে ৭৭ তম বাৎসরিক ওরস মোবারক উদ্ভোধনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উক্ত উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার একি মিত্র চাকমা, ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম তুষার, বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফুল মিয়া, রাহাত আলী কলেজের প্রফেসার সমির মজুমদার, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শফিকুর রহমান, করিম মাষ্টার ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরান আহমেদ, যুবলীগ নেতা জালাল, জয়নাল, বাবুল মিয়া, সাংবাদিক মো.নাছির উদ্দিন, আশিকুর রহমান, মো.বাহারুল ইসলাম, মাজার কমিটি ও ওরস পরিচালনা কমিটি এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এই মহান সাধক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধ্যনগর গ্রামে ১৮৬৪ কিংবা ১৮৬৫ খৃস্টাব্দের কোনো এক সময় জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম সাল নির্দিষ্ট করে জানা যায় না। ওফাতের সময় তার বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৮০ বা ৮২ বছর। সে হিসেব তার জন্ম সাল ধারণা করা হয়।
রাহাত আলী শাহ’র পিতার নাম আইনুদ্দিন মোল্লা,মাতা আয়না বিবি,দাদা মোহাম্মদ হানিফ বেপারী। রাহাত আলী শাহের আসল নাম ছিল (মাদ্রাসা রেকর্ড অনুযায়ী) আবদুল আলীম। রাহাত আলী তার ডাক নাম।
দু’ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। বড় ভাই রহমত আলী। পারিবারিক সিদ্ধান্তে তাকে শিশুকালে গ্রামের মসজিদ ভিত্তিক স্থানীয় মক্তবে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। অল্পদিনের মধ্যেই শুধু মক্তবের পড়াই নয় পবিত্র কোরানও মুখস্থ করতে শুরু করেন রাহাত আলী।
মক্তবে পড়া শেষ হলে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল উপজেলার নাসিরনগর মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন বলে জানা যায়।
এই মহান সাধকের দেশ-বিদেশে অগনতি ভক্ত-অনুসারী থাকলেও তার সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায় না। তবে তাকে ঘিরে নানা কাহিনী ও কারামতের কথা প্রচলিত আছে।
কথিত আছে, এ সময় তিনি অলৌকিকভাবে হজরত খাজা খিজির (আ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তার কাছ থেকে মারফতের উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীতে অলৌকিকভাবে বড়পীর আবদুল কাদির জিলানী, খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি, মুজাদ্দেদ আলফেসানী ও বাহাউদ্দিন নফসবন্দীর দিদার লাভ করে ফায়েজ প্রাপ্ত হন।
বলা হয়ে থাকে, শাহানশাহ রাহাত আলী শাহ মূলত ছিলেন বাকাবিন্নাহর অনুসারী। তার আধ্যাত্মিকতায় চার তরিকা একাকার হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল তরিকায়ে রাহাতিয়া। তার সাধনার ধারা ছিল আমিত্বকে বিলীন করে পরমসত্তার সাথে একাত্ম হওয়া। লীন হওয়ার পরমের সাথে এটাই মূলমন্ত্র।
জাগতিক কোনো কিছুর প্রতি তার মোহ ছিল না। তিনি সদাই থাকতেন আপন খেয়ালে। মজনুন থাকতেন আপন সাধনায়। কারো কিছুর প্রতিই তার আগ্রহ ছিল না। এমনকি ভক্ত-অনুসারীদের দেয়া জিনিস পত্র ও তিনি ছুঁয়ে দেখতেন না।
সাধনায় যখন তিনি লীন হয়ে যেতেন অর্থাৎ মজনুন থাকতেন তখন দুনিয়াবি কোনো বিষয়ের প্রতিই তার খেয়াল থাকতো না। এমনকি পোষাক আশাকেরও তেমন কোন বালাই থাকতো না। মাঘ মাসের প্রচণ্ড শীতেও গায়ে কাপড় রাখতেন না।
পোশাকের মতো খাওয়া দাওয়ার প্রতিও তার কোন আগ্রহ ছিল না। জানা যায়, তিনি তেমন কিছুই খেতেন না। নামে মাত্র আহার গ্রহণ করতেন কখনো সখনো। নিজ ইচ্ছায় চেয়ে কোনো খাবার নিতেন না। ভক্তরা পীড়াপীরি করলে সামান্য আহার নিতেন তাদের মন রাখতে।
কামনা-বাসনার ঊর্ধ্বের এই সাধক ছিলেন চিরকুমার এক মহান মজনু পুরুষ। শৈশব থেকেই তার মধ্যে অলৌকিকতার প্রকাশ পেতে শুরু করে। যা পরবর্তিতে ছড়িয়ে পরলে তার কাছে মানুষ ভিড় করতে শুরু করে। ভক্ত আশেকানের মিলন মেলায় পরিণত হয় তাকে ঘিরে।
এ মহান সাধক ২ আগস্ট ১৯৪৫ খৃস্টাব্দ (১৮ শ্রাবণ ১৩৫২ বঙ্গাব্দ) রোজ শুক্রবার দেহলোক ত্যাগ করেন। তিনি যে স্থানে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তার কাছেই মাছিনগরে তাকে সমাহিত করা হয়। সেই সমাধি ঘিরেই গড়ে উঠে মাজার। আর মাজারকে কেন্দ্র করে ভক্ত-আশেকানের মিলন মেলা।
শাহেনশাহ রাহাত আলী শাহর মাজারকে গিয়েই গড়ে উঠে তার জ্ঞান ও আধ্যাত্ম চর্চার প্রাণকেন্দ্র। প্রতি বছর ১৩ থেকে ১৯ শ্রাবণ লাখ লাখ ভক্ত ও আশেকানের উপস্থিতিতে ওরস উদযাপিত হয়।