জুন মাসেই বাজেট উত্থাপিত হবে জাতীয় সংসদে। আসন্ন বাজেটের পরিধি কেমন হবে জানিনা। কয়েক বছর ধরেই বাজেটে উৎপাদন খাতকে উৎসাহিত করা হয়েছে। কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, ভর্তুকিও দেওয়া হয়েছে কোন কোন খাতকে উৎসাহিত করার জন্য। উন্নয়ন খাতে বরাদ্ধ ছিল সবচাইতে বেশী। এই ব্যয় নির্ধারন করা সম্ভব হয়েছে কারন, দেশের রাজস্ব উৎপাদন ছিল আশানুরূপ। রাজনৈতিক অস্থিরতা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে উৎপাদনে ব্যহত হয়নি। ফসল উৎপাদন হয়েছে রেকর্ড পরিমান। ২০২০-২১ সালের বাজেট প্রণয়নে প্রথম বাধা হবে ৩ মাসের লক ডাউন। লক ডাউনের কারনে সব সেক্টরে উৎপাদন ব্যহত হয়েছে ব্যাপকভাবে। দেশের জনজীবন এখন ব্যয়বহুল এবং উচ্চাভিলাষী। গ্রাম্য অর্থনীতি প্রবর্তিত হলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মধ্যেও পরিবর্তন এসেছে। লক ডাউন নিশ্চিত করতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করতে হয়েছে সরকারকে। এমন বাস্তবতায় জাতীয় তহবিল থেকে ভর্তুকি দেওয়ার সক্ষমতা সরকারের আছে কিনা জানিনা। ভর্তুকি পুরনে বাজেটে কর বৃদ্ধি হলে অসন্তোষ উষ্কে দেওয়ার লোকের অভাব নেই দেশে। বিরোধী দলের নেতারা সেই লক্ষেই সংগঠিত হচ্ছে। এত বড় বিপর্যয়ে দেশে খাদ্যাভাব হয়নি। দ্রব্য মূল্যও ছিল নিয়ন্ত্রনে। কিছু চুরি আর অনিয়ম হলেও সরকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পেরেছে সব। বিদেশী সাহায্য ছাড়াই দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজমান। ভর্তুকি পুরন করতে কর আরোপ করা হলে চুপ করে থাকা নেতারা আন্দোলনে যাওয়ার চেষ্টা চালাবে। অথচ বর্তমান কোভিড-১৯ সমগ্র বিশ্বকেই বিপর্যস্থ্য করে দিয়েছে। আমদানিযোগ্য পন্যের মূল্য বৃদ্ধি হবে নিশ্চিত। আমাদের দেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তেমন কোন বড় বাজার নেই পৃথিবীতে। গার্মেন্টস শুধু তৈরী করার মূল্য পায়, তা’ও এখন বন্ধ রয়েছে। গার্মেন্টস কারখানা স্বচল না হলে শ্রমিকরা বেকার হবে, শ্রমিক সংগঠনগুলি মরিয়া হয়ে উঠিবে আন্দোলনের নামে।আসন্ন বাজেট নিয়ে শিক্ষিত সমাজের একটি বড় অংশ ইতিমিধ্যেই তৎপরতা চালাতে শুরু করেছে। অপ্রত্যাশিত করোনা সংক্রমন বিশ্ব অর্থনীতিকেই ভেঙ্গে দিয়েছে। সাধারন জনগন বাস্তবতাটি জেনেও ক্ষুদ্ধ হবে উষ্কানি পেয়ে। ৭৪ এর মত পরিকল্পিত অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ নিবে সুযোগসন্ধানিরা। তাই, প্রাক বাজেট আলোচনা জরুরী। দেশের বাস্তব চিত্রটি জনসম্মুখে প্রকাশ করা জরুরী। সরকারের নীতিনির্ধারকদেরও উচিৎ হবে জনগনকে সব অবহিত করার। করোনার কারনে উদ্ভুত অর্থনৈতিক অবস্থ্যাটি নিয়মিত প্রচার হওয়া জরুরী। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিকে পুঁজি করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে, তাদের প্রতিও নজর রাখা দরকার। দেশের সার্বিক উন্নয়ন প্রকল্প এখন স্থবির হয়ে আছে। পদ্মা সেতুর কাজও এখন ধীর গতিতে চলছে। এইসব মেগা প্রকল্প অর্থনৈতিক কারনে ব্যহত হলে দেশ আবার পিছিয়ে পরবে। তাই ২০২০-২১ সালের বাজেট গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যত কর্মযজ্ঞে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবেনা তবে, ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
২৯ মে ২০২০।