বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বানাতে কিছু মানুষ উঠে পরে লেগেছে। আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়ে বি এন পি সহ রাজনৈতিক নেতারা প্রচারনায় নেমেছে। নেতাদের বক্তৃতা বিবৃতি শুনে মনে হয় সরকারকে টেনে নামিয়ে ফেলবে। কোনভাবে সরকারকে হটাতে পারলেই তারা ক্ষমতায় দখল করার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু আসলেই কি বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার অবস্থা হবে?
একটি দেশের জিডিপি’র ৪০% শতাংশের বেশী ঋন থাকলে সে দেশ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক ঋন জিডিপি’র ৩০% শতাংশের চেয়েও কম। শ্রীলঙ্কায় জাতীয় রিজার্ভ না থাকায় তারা খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আমদানি করতে পারেনি। বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন এখন দেশীয় চাহিদা পুরন করছে। অতএব খাদ্য ঘাটতির সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশের রপ্তানি এবং রেমিটেন্সের পরিমান সন্তোষজনক। জাতীয় রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। করোনার মধ্যেও বাংলাদেশে জিডিপি ছিল ভারতের উপরে। ঋনের টাকায় প্রকল্প নির্মাণ করে সরকার শ্রীলঙ্কাকে উৎপাদনমুখী করতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটি প্রকল্প রাজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশের বেশীরভাগ প্রকল্প শতভাগ বিদেশী ঋন নির্ভর নয়। পদ্মাসেতু নির্মান করা হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে। গার্মেন্টস এবং মৎস রপ্তানীতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে। চট্রগ্রাম বন্দর করোনার মধ্যেও পুর্ণ কার্যক্রম চালিয়েছে। বিশ্বমন্দা অর্থনীতির মধ্যেও বাংলাদেশের রাজস্ব উৎপাদন এবং জিডিপি ছিল উর্ধমুখি। অতএব বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার অবস্থা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এছাড়াও ঋন গ্রহণ দোষের নয়। আমেরিকাও ঋণ নিয়েছে এবং তাদের ঋন জিডিপি’র চেয়ে ৭০% শতাংশেরও বেশী। জার্মানীর অবস্থাও একই রকম। জাপানের ঋণ জিডিপি’র চেয়ে প্রায় ২০০% বেশী। কিন্তু উৎপাদন এবং পরিশোধের সক্ষমতা থাকায় ঐ সব দেশ দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আই এম এফ বহু দেশে ঋন দিয়েছে যাদের ঋণের পরিমান জিডিপির ৭০% শতাংশেরও বেশী। ঋণ দিতে না পারলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলিও বন্ধ হয়ে যবে। তবে যে কোন দেশেরই রাজনৈতিক স্থিতিশিলতা জরুরী। অস্থির রাজনীতি দেশের উৎপাদন ব্যহত করে এবং উৎপাদন ব্যহত হয়। ফলে ঋণ পরিশোধেও বিপত্তি ঘটে।
অবকাঠামো নির্মান ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তবে সেই অবকাঠামো হতে হবে উৎপাদনমুখী। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে ম্লান করে দিয়েছে। আগামি নির্বাচনেও যদি বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হয় তাহলে বিরোধী দল অস্তিত্ব হারাবে। এটাই এখন তাদের অন্যতম প্রধান ভাবনা। তারা দীর্ঘ ১৫ বছর কোন সফল আন্দোলন করারও যোগ্যতা দেখাতে পারেনি। তাই সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে সরকারকে অজনপ্রিয় করতে চায়। তবে একটি বিষয় পরিস্কার যে বাংলাদেশ কখনোই শ্রীলঙ্কার অবস্থানে যাবেনা।
আজিজুর রহমান প্রিন্স, কলামিস্ট ও আওয়ামীলীগ নেতা, টরন্টো, কানাডা।