টস জিতে বাংলাদেশকে আগে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জনিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। তোর এ সিদ্ধান্ত অনুমিতই ছিল। কিন্তু নিজেদের শক্তিশালী পেসারদের কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে শুরুতেই চাপে ফেলার যে আশার গুড় জমিয়ে রেখেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা তাতে বালি ঢেলে বাংলাদেশ। শুধু বিশ্বকাপেই নয়, নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ দাঁড় করায় টাইগাররা। চলতি আসে এখন পর্যন্ত এটিই সর্বোচ্চ সংগ্রহ। প্রোটিয়াদের কোনো চমক দেখাতে দেয়নি বাংলাদেশ। ৩০৯ রানে আটকে দিয়ে জয় তুলে নিয়েছ ২২ রানের।
নিজেদের কাজটা ঠিকভাবে করেছেন বোলাররাও।
ভালো শুরুর পর ২৩ রানে রান আউট হন ওপেনার কুইন্টন ডি কক। ফাফ ডু প্লেসির সঙ্গে বড় জুটি গড়ার আগেই আরেক ওপেনার মাক্রামকে ফেরান সাকিব। ৪৫ রানে বোল্ড হন তিনি। এরপর সাবলীল খেলতে থাকা ডুপ্লেসিকে বোল্ড করেন মেহেদী মিরাজ।
তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে দিশা দেখাচ্ছিলেন ডেভিড মিলার। ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলো ফন ডার ডুসেনের সঙ্গে গড়া তার জুটি। কিন্তু সেই জুটিতে আঘাত হেনে বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দিলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
৩০তম ওভারে মিলারকে জীবন দেন সৌম্য সরকার। সাকিব আল হাসানের বলে মিড অফে তুলে মেরেছিলেন মিলার। কিন্তু লাফিয়েও ক্যাচটি তালুবন্দি করতে পারেননি সৌম্য। দুই ওভার পরে আবারও মিলারকে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন মোস্তাফিজ। কিন্তু থার্ডম্যানে ক্যাচটি নিতে ব্যর্থ হন মাহমুদুল্লাহ। তবে মিলারের নড়বড়ে ব্যাটটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে নেননি মোস্তাফিজ। ৩৮ রানে তাকে মেহেদী মিরাজে তালুবন্দি করান তিনি।
চোখ রাঙাচ্ছিলেন রাসি ফন ডার ডুসেন। ৩৮ বলে ৪১ করা ডুসেনের স্ট্যাম্প উপড়ে দেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। আন্দিলে ফেলুকাওয়ায়ুকে ৭ রানে বিদায় করেন সাইফুদ্দিন। চাপে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরো চেপে ধরেন মোস্তাফিজ। ১০ রানে ক্রিস মরিসকে ফিরিয়ে শেষ আশাটুকুও যেনো ভেঙে দেন ফিজ। প্রোটিয়াদের কফিনে শেষ পেরেকটিও ঠুকে দেন মোস্তাফিজ। টিমটিম করে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা ডেপি ডুমিনিকে ৪৫ রানে বোল্ড করে কাটার মাস্টার।
এদিকে আগে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৩৩০ রান করে টাইগাররা।
এটি শুধু বিশ্বকাপেই নয়, বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসেই সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড। এর আগে ওয়ানতে টাইগারদের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ছিল ৩২৯। ২০১৫ সালে ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটে এই রান করেছিল টাইগাররা। আর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলী স্কোর ছিল ৩২২। ২০১৫ সালের আসরে নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেটে এই সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ।
সম্ভবত আগে ব্যাটিংটা বাংলাদেশ দলও চায়নি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিংয়ের জুজু কাটাতে বেশি সময় লাগেনি। দুই ওপেনারের সাবলীল ব্যাটিংয়েই ভালো একটা ভিত্তি পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তামিম অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি। দলীয় ৬০ রানের সময় ব্যক্তিগত ১৬ রানে ফেরেন তিনি। আন্দিলে ফেলুকাওয়ায়ুর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাট দেন তামিম।
সৌম্য ছিলেন স্বরূপে। প্রোটিয়া পেসারদের তোপগুলো একের পর এক বাউন্ডারি ছাড়া করেছেন শৈল্পিক সব শটে। ৩০ বলে ৪২ রান করে তিনি শিকার হন ক্রিস মরিসের।
এরপর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মুশফিকুর রহিম। প্রতি বলে বলে অভিজ্ঞতার ছাপ রেখে গেছে মুশি-সাকিব জুটি। তাদের ১৪২ রানের জুটি ভাঙে ৩৬তম ওভারে। ৮৪ বলে ৭৫ রানে ফেরেন সাকিব। লেগস্ট্যাম্প ছেড়ে সুইপ করতে গিয়ে ইমরান তাহিরকে উইকেট উপহার দেন সাকিব।
২১ বলে ২১ রান করে ইমরান তাহিরের দ্বিতীয় শিকার হন মিঠুন। দলীয় ২৫০ রানের সময় ব্যাক্তিগত ৭৮ রানে ফেরেন মুশফিক। এরপর রানের চাকা কিছুটা শ্লথ হয়ে যায়।
শেষ দিকে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে বড় সংগ্রহ পাইয়ে দেন মোসাদ্দেক। দুজনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩৩০ রান তোলে বাংলাদেশ। মোসাদ্দেক ২৬ রানে ফিরলেও মাহমুদুল্লাহ অপরাজিত থাকেন ৪৬ রানে।
স্কোর:
বাংলাদেশ ৩৩০/৬ (৫০)
তামিম ১৬ (২৯)
সৌম্য ৪২ (৩০)
সাকিব ৭৫ (৮৪)
মুশফিক ৭৮ (৮০)
মোহম্মাদ মিঠুন ২১ (২১)
মাহমুদুল্লাহ ৪৬ (৩৩)
মোসাদ্দেক ২৬ (২০)
মিরাজ ৫ (৩)
বোলার:
লুঙ্গি এনগিদি ৪-০-৩৪-০
কেগিসো রাবাদা ১০-০-৫৭-০
আন্দিলে ফেলুকাওয়ায়ু ১০-১-৫২-২
ক্রিস মরিস ১০-০-৭৩-২
এইডিন মারক্রাম ৫-০-৩৮-০
ইমরান তাহির ১০-০-৫৭-২
জেপি ডুমিনি ১-০-১০-০
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০৯/৮ (৫০)
ডি কক ২৩ (৩২)
মারক্রাম ৪৫ (৫৬)
ডু প্লেসি ৬২ (৫৩)
মিলার ৩৮ (৪৩)
ফন ডার ডুসেন ৪১ (৩৮
জেপি ডুমিনি ৪৫ (৩৭)
আন্দিলে ফেলুকাওয়ায়ু ৮ (১৩)
ক্রিস মরিস ১০ (১০)
কেগিসো রাবাদা ১৩* (৯)
ইমরান তাহির ১০* (১০)
বোলার:
মোস্তাফিজুর রহমান ১০-০-৬৭-৩
মেহেদী মিরাজ ১০-০-৪৪-১
মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ৮-১-৫৭-২
সাকিব আল হাসান ১০-০-৫০-১
মাশরাফি বিন মুর্তজা ৬-০-৪৯-০
মোসাদ্দেক হোসেন ৬-০-৩৮-০
বাংলাদেশ ২২ রানে জয়ী।