পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে নিজ দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ।
ঢাকা সফররত সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আব্দুল্লাহ আল কাসাবি এবং অর্থনীতি ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মেদ বিন মাজইয়াদ আল-তোয়াজরি আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে অবহিত করেন।
বাংলাদেশে আসার আগে সৌদি বাদশাহর সঙ্গে নিজের সাক্ষাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সৌদি বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী ড. মাজিদ বলেন, বাদশাহ সালমান বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান।
মন্ত্রী জানান, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য তারা বিদ্যুৎ, রেল, বিমান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগসহ মোট সাতটি খাত চিহ্নিত করেছেন। সৌদি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সৌদি বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, এ দেশ একটি এশিয়ান টাইগার।
ড. মাজিদের মতে, বাংলাদেশ বিশেষ করে রপ্তানি খাতে অসাধারণ সফলতা অর্জন করেছে। দেশটির রপ্তানির পরিমাণ ১০ বিলিয়ন থেকে ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
দুই মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। ‘(বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য) নিজের এবং আপনার টিমের জন্য আপনার গর্ব হওয়া উচিত,’ বলেন ড. মাজিদ।
ড. মাজিদ আরো বলেন যে বাংলাদেশের জন্য যা ভালো তা সৌদি আরবের জন্যও ভালো।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য ও অতি দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার গতির প্রশংসা করে দুই মন্ত্রী জানান, তাঁরা যা দেখেছেন তা তাঁদের প্রত্যাশার বাইরে ছিল।
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে দুই সৌদি মন্ত্রী বলেন, তাঁরা এ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান।
বৈঠকের শুরুতে সৌদি আরবের মন্ত্রীরা তাঁদের বাদশা ও যুবরাজের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পৌঁছে দেন। সৌদি মন্ত্রীদের স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর শুভেচ্ছা সৌদি বাদশাহ ও যুবরাজকে পৌঁছে দিতে বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে যেখানে সরকার বিভিন্ন কোম্পানিকে জমি দিচ্ছে, যাতে তারা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী শিল্পকারখানা স্থাপন করতে পারে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সৌদি উদ্যোক্তাদের অভিন্ন সুবিধার জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার কথা বলেন।
সৌদি বিনিয়োগকারীদের চিহ্নিত করা বিমান খাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার লালমনিরহাটে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার জন্য আইন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন।
এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাচনী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান এবং সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ উপস্থিত ছিলেন।
সৌদি আরবের দুই মন্ত্রীসহ ৩৫ সদস্যের একটি বড় প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করতে বুধবার রাতে একটি বিশেষ ফ্লাইটে করে ঢাকা আসে।
সূত্র : এন টি ভি