আমাদের দেশের গবেষকরা প্রাণঘাতী ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় কার্যকর ওষুধ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ডেঙ্গু রোগের চরম পর্যায়ে প্ল্যাটিলেটের ভাঙন রোধ করে রক্তক্ষরণ বন্ধের উপায় পাওয়ার দাবি করেছেন তারা। এর মাধ্যমে অনেক জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রায় দুই বছরের গবেষণায় মিলেছে ‘এ্যালট্রম্বোপ্যাগ’ নামে একটি জেনেরিক ওষুধ। ‘এ্যালট্রম্বোপ্যাগ’ নামে জেনেরিক ওষুধটি এতদিন রক্তের ইমিউথ্রম্বোসাইটোপেনিয়া ক্রনিক লিভার রোগ সারাতে ব্যবহার হতো। একই ওষুধ ডেঙ্গুর ফলে সৃষ্ট রক্তক্ষরণ বন্ধেও কাজ করে যার প্রমাণ তারা পেয়েছেন। যদিও তৃতীয় ট্রায়ালের আগে এখনই একে ব্যবহার না করতে চিকিৎসকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশেও বিশ্ব মানের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্ভব বলে মনে করেন গবেষক দলের প্রধান ডক্টর নুরুন নবী। বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট-এর জার্নাল ‘ই- ক্লিনিক্যাল মেডিসিনে’ প্রকাশিত তাদের নিবন্ধটি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও সাড়া ফেলবে বলে মনে করেন তিনি। ১০১ জন রোগীর ওপর চালানো পরীক্ষায় তিন শতাংশের ক্ষেত্রে বমি ও চার শতাংশের ডায়রিয়া হলেও বাকিরা ছিলেন পুরোপুরি নিরাপদ। আগামী বছরের শেষে বিস্তৃত পরিসরে তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের পর ওষুধটির বিষয়টি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসার কথা জানালেন তারা।
প্রসঙ্গত, আমাদের দেশে প্রতি বছর মে থেকে আগস্ট মাস, কখনও কখনও তারও পরের কয়েক মাস জুড়ে চলে ডেঙ্গুর তাণ্ডব। প্রাণঘাতী রোগটি কখন কাকে ধরে সে ভয়ে থাকতে হয় কম বেশি সবাইকে। তবে এবার মনে হয় সে অবস্থার অবসান হতে যাচ্ছে শীঘ্রই। গেল বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়তে থাকলে মৌসুমি স্যানাল নামে এক চিকিৎসক কয়েকজন রোগীকে ওষুধটি দিয়ে সফলতা পান। এটি দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক এ এইচ এম নুরুন নবী ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডাক্তার আহমেদুল কবিরের নেতৃত্বে ১২ জনের গবেষক দল এর ওপর কাজ শুরু করেন। প্রথম ধাপে সফলতার পর দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়ালেও ‘এ্যালট্রম্বোপ্যাগে’র কার্যকারিতা পান তারা।
ডিএমসির অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির জানান, রোগীদেরকে গ্রুপ-১ এবং গ্রুপ-২ দেয়ার পর খুব আশাবাদী রেজাল্ট পাওয়া যায়। এটি দেয়ার পর রোগী সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাচ্ছে। এটির সাইডএফেক্ট খুব কম। ওষুধের দামও ৩০০ টাকা, তিনটির দাম ৯০০ টাকা পড়বে এর চেয়ে বেশি খরচ হবে না।