শোকাবহ দিন ১৫ই আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ক্ষমতালোভী খুনীচক্র, মানবতার শত্রু প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকচক্রের হাতে বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, বাঙালিদের মুক্তির দূত, বাংলাদেশ নামক কবিতার মহা কবি, বিশ্বের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ, বাঙালির নিরন্তন প্রেরণার চিরন্তন উৎস, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
সেদিন ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী, মহিয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভ্রাতা শেখ আবু নাসের, জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির পিতার ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নৃশংসভাবে নিহত হন।
ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এ বর্বরতায় আজও কাঁদে বাঙালি, আজও কাঁদে বিশ্ব। সদ্য স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশকে যিনি স্বল্প সময়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, পিতৃস্নেহে দেশের সকল জনতাকে স্ব স্ব দক্ষতা অনুসারে কাজে লাগিয়ে দিচ্ছিলেন, পুরো দেশকে নিয়ে উন্নয়নের ছক বুনছিলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের মডেল বানাতে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন, শোষিতদের কষ্ট লাঘবে রাত-দিন খেটে যাচ্ছিলেন, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে পরিচিত করাচ্ছিলেন বীর ও পরিশ্রমী জাতি হিসেবে তখনই এই মহান বিশ্বনেতাকে দেশী-বিদেশী চক্র ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার ঘনিষ্ঠজনদের হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বে বিশ্বাসঘাতক, বর্বর ও খুনি রাষ্ট্রের তকমা উপহার দেয় বিপথগামী পশুত্ব পোষণকারী মানুষ নামের পেতাত্মারা।
তারপর ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে পালাবদল হতে থাকে ক্ষমতার। একের পর এক খুনের মহাযজ্ঞ চলে সর্বত্র। বিশ্বাঘাতকরাও বুলেটে বুলেটে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়। জনগণকে ভালবেসে আপন করে কাছে নেওয়ার কেউ আর অবশিষ্ট থাকেনা।
জাতি তাদের প্রিয়জন, এদেশের জন্ম ও বেড়ে উঠা যে মহামানবের হাতে তারজন্য আজও কাঁদে। ১৫ আগস্ট এলে জাতি সেদিন ভোরবেলার নির্মমতার কথা স্মরণ করে, উচ্চস্বরে কাঁদে। কি অপরাধ ছিল তাঁর? এদেশকে স্বাধীন করা থেকে গঠন করা, বিশ্বকে লাল-সবুজের পতাকার একটি দেশকে পরিচিত করানো, ধ্বংসাবশেষ থেকে দেশকে টেনে তুলা, রাজাকারদের ক্ষমা করা – এসব?
১৯৭৫ এর নির্মম খুন সারাবিশ্বে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করেছে। জাতি হিসেবে এখনও আমাদের লজ্জা পেতে হয় এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের কারণে।
আজও খুনীরা সক্রিয়। এখনও ওরা খুনের নেশায় মত্ত। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের শেষ রক্তটিকেও ওরা খুন করতে চায়।
তাহলে কি বাংলাদেশ সৃষ্টিই ওদের কষ্টের কারণ??
প্রদীপ কুমার দেবনাথ,
শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।
(বি.দ্রঃ মুক্তমতামতের জন্য সম্পাদক কোনভাবে দায়ী নন।)