ডিবিএন ডেস্কঃ বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রখ্যাত, বরেণ্য নেতা কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা গত সপ্তাহের রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান। তার এই অকাল প্রয়াণ হাজারো মানুষকে বাক্রুদ্ধ করে দিয়েছে। তারাগন্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে তার জানাজা নামাজে দেখা যায় হাজারো জনতার উপস্থিতি। মানুষ তাকে কতটা মনে প্রাণে ভালবাসে তার প্রমাণ পাওয়া গেল তাকে বিদায় দেওয়ার শেষ বেলায়। আত্মীয়-স্বজন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ হাজারো মানুষের ঢল নেমেছিল সেদিন।
কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা শুধু একজন ব্যক্তি নন, একটি রাজনৈতিক প্রতিভার নাম, সকল কৃষিবিদের অনুভূতির নাম। তিনি ছিলেন অত্যন্ত গণমুখী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী, জনবান্ধব, একজন নিবেদিত প্রাণ এবং ত্যাগী ছাত্র নেতা। মানুষের জন্য আজীবন ভেবে গেছেন, কাজ করে গেছেন। তবে মানুষটি অনেকটা অবমূল্যায়িত হয়ে সকলের অগোচরে প্রদীপের নীচের অন্ধকারে থেকেই চলে গেলেন। তার এই অকাল প্রয়ানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওমীলীগের সবাই গভীর মর্মাহত হয়েছেন এবং শোক প্রকাশ করেছেন।
না ফেরার দেশে চলে যাওয়া ৬৩ বছর বয়সী কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা তিন মাস আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। প্রথমে তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হন পরে তার জন্ডিস, ফুসফুসে সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট, ইনসুলিন ও অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যা ধরা পড়ে। ২৩ অক্টোবর তাকে ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ক্যানসার ধরা পড়ে বদিউজ্জামান বাদশার শরীরে।
পরবর্তীতে বাংলাদেশে নিয়ে এসে বাদশাকে রাজধানীর পান্থপথে বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাকে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি) হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। মৃত্যুর আগের শেষ দুই দিন তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
১৯৫৮ সালের ৫ জানুয়ারি নালিতাবাড়ীর ছিটপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা। মেধাবী ছাত্র বদিউজ্জামান বাদশা ১৯৭৪ সালে ৫টি লেটারসহ এসএসসি পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ জামালের সহপাঠী ছিলেন। কিন্তু তিনি কখনো শেখ জামালের সহপাঠী পরিচয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে বিশেষ সুবিধা নেননি বা নেওয়ার চেষ্টাও করেননি, যা ইদানীং হচ্ছে। এইচএসসি পাশ করে সিলেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। নালিতাবাড়ীর অজপাড়াগাঁয়ের মেধাবী ছাত্র বদিউজ্জামান বাদশা গ্রামবাংলার কৃষি ও কৃষকদের সেবার ব্রত নিয়ে মেডিকেল কলেজ ছেড়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অকালে চির বিদায় নিলেও তার ছিল দীর্ঘ এক বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবন।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রথমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি, নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন।