একেএম কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: নওগাঁর বদলগাছীতে ছেলের চুরি ও ছিনতাই মামলা ধাঁমাচাপা দিতে লাকি আক্তার (৩৭) নামের এক নারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ চেষ্টা মামলা সাজানোর অভিযোগ উঠেছে। লাকি আক্তার উপজেলার মহেশপুর গ্রামের মামনুর রশিদের স্ত্রী। চুরি ও ছিনতাই মামলার আসামী ছেলে শুভ হোসেন (২৫) ও ভাতিজা আশিক হোসেন(২৪)।
জানা যায়, উপজেলার মহেশপুর গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে সেনা সদস্য মাসুদ রানার ডিস লাইন গত জুন মাসে মাসিক ১৩ হাজার টাকা চুক্তিতে দুই বছর মেয়াদে ভাড়া নেয় কোলা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে মিঠু হোসেন (২৭)। পরে ঔই লাইনের মেরামত বাবদ ৭০ হাজার টাকা করে মিঠু। কিন্তু এক মাস পর মাসুদ রানা ভাগিনা শুভ এসে ঔই লাইন জোড় পূর্বক কেড়ে নেয়। মিঠু খরচের টাকা চাইলে তাকে প্রান নাশের হুমকি দেওয়া হয়।
এরপর গত ১১ জুলাই মিঠু বাড়ি হতে পারসোমবাড়ি বাজারে আসার পথে শুভ হোসেন, তার ফুফাতো ভাই মিথ্যা ধর্ষণ চেষ্টা মামলার সাক্ষি আব্দুল খালেকের ছেলে আশিক হোসেন ও সেনা সদস্য মাসুদ রানার পিতা মোজাম্মেল হোসেন মিঠুর উপর অর্তকিত হামলা চালিয়ে মারধর করে বাম হাত ও কনুই আঙ্গুল ভেঙ্গে ফেলে এবং তার কাছে থাকা ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে নেয়। এ ঘটনায় মিঠু বাদী হয়ে বদলগাছী থানাতে গত ১৫ জুলাই একটি মামলা দায়ের করে। অপরদিকে শুভ হোসেন বাড়ি আসার পর হতে আশেপাশের এলাকা হতে নিয়মিত ডিস ও ইন্টারনেটের তার- মেশিন চুরি হতে থাকে। আশিক ও কাজল নামে দুইজনকে নিয়ে শুভ চুরি ঘটনা ঘটাত। নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে ঝামেলা হলে কাজল চুরির ঘটনা ওই এলাকার ডিস ও ইন্টারনেট ব্যাবসায়ী আশরাফুল ইসলাম, রাসেল হোসেন ও রিপন হোসেনকে বলে দেয়। পরে এ বিষয়ে আশরাফুল ৫ জুলাই বদলগাছী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করে।
এরপর ২০ জুলাই শুভ হোসেন আদালত হতে জমিন নেয় এবং একই দিনে তার মা লাকি আক্তার ছেলের মামলাকে ধাঁমাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নওগাঁ জেলা জজ কোর্টের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে রাসেল, মিঠু, রিপন ও আশরাফুলকে জরিয়ে একটি মিথ্যা ধর্ষণ চেষ্টা মামলা দায়েরের আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটির তদন্তের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট নির্দেশ দেয়। বাদী লাকি আক্তার মামলার আরজিতে উল্লেখ করেন যে, গত ৯ জুলাই দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটে পারসোমবাড়ি বাজারের মধ্যে ৪ জন মিলে তাকে বিবস্ত্র করে ধর্ষনের চেষ্টা করেন। প্রকাশ্য দিবালোকে বাজারের মধ্যে এতবড় একটি ঘটনা অথচ বাজারের কেউই তা জানেন না। এমন কি ওই মামলার সাক্ষী নিজেই অবগত নয় ঘটনার বিষয়ে। এ মামলার ২নং সাক্ষি তার আপন ভাই ও ১নং সাক্ষি মাসুদ রানার মামা। মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর চেষ্টার এ ঘটনার তীব্র নিন্দা সহ এর সঙ্গে জরিতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।
ধর্ষণ চেষ্টা মামলার ৩নং সাক্ষী বাদীর আপন দেবর দুধকুড়ি গ্রামের জেকের আলী (জাকির গোয়াল) বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন কিছুই জানি না । মামলা করার পর লাকি আমার বাড়ি এসে বলেছে একটি মামলায় নাকি আমাকে সাক্ষী করা হয়েছে। তবে সেটা কি মামলা সেটাও আমি জানিনা।
ঘটনাস্থলের স্থানীয় চা দোকানী জুয়েল হোসেন, কাপর ব্যাবসায়ী রুহেলসহ একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ধর্ষণ চেষ্টা তো দূরের কথা ঔই দিন লাকি আক্তারকে আমরা কেউ এখানে আসতে দেখিনি। তবে তার ছেলে শুভ এসেছিল। শুভর সঙ্গে রাসেল, মিঠু ও রিপনের ডিস লাইন নিয়ে সামান্য কথা কাটাকাটি দেখেছি। পরে ঐদিন সন্ধ্যায় তা মিমাংসাও হয়েছে শুনেছি।
পারসোমবাড়ি বাজার বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মশিউর রহমান ও সহ সভাপতি সাবলু হোসেন বলেন, বাজারের মধ্যে দিনে দুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে এতবড় একটি ঘটনা অখচ এতদিন হয়ে গেল আমরা কেউই জানিনা সেটা কেমনে হয়। এমন ঘটনা বাজারে মোটেও ঘটেনি। মনে হয় ছেলের বিরুদ্ধে মামলার কাউন্টার হিসেবে এই মামলা করা হয়েছে।
ধর্ষণ চেষ্টা মামলার আবেদনে করা আসামী রাসেল হোসেন ও রিপন হোসেন বলেন, ঘটনাটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন একটি মামলা। প্রকাশ্যে দিবালকে দুপুর বেলা এরকম ঘটনা ঘটলো আর বাজারের কেউ জানলোনা। সেতা কেমন করে হয়। তারা পুরোটায় সাজানো মামলার আবেদন করেছে। মামলার আবেদনে আমিসহ যে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা সবাই আমরা লাকীর ছেলের বিরুদ্ধে ডিস লাইন ও ইন্টারনেট লাইন এর তার চুরির মামলা করেছিলাম যার কারনেই উল্টো আমাদের এমন মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে আদালতে আবেদন করেছে।
মামলার বাদী মোছা: লাকী বলেন, দুপুর বেলাতেই আমার সাথে ঘটনাটি ঘটছে। যা সত্যি। বাজারের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটলো আর বাজারের দোকানী,পথচারী বা বাজার কমিটির কেউ জানলো না এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, তদন্ত হোক তাহলেই জানা যাবে সঠিক বলছি কিনা।
বদলগাছী থানার অফিসার ইনর্চাজ আতিয়ার রহমান বলেন, লাকি আক্তার নামে কোন নারী এমন অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। এরকম গুরুত্বর অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় এলে মামলা নেওয়া হোক বা না হোক অভিযোগ নিয়ে অবশ্যই তা তদন্ত করে দেখা হয়।