প্রযুক্তি পণ্যে বিনিয়োগ করার মত চ্যালেঞ্জ নেয়ার কোম্পানি বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। এই চ্যালেঞ্জ টা নিয়ে ওয়ালটন সেই কাজটিই করেছে। যুগের চাহিদা মত উৎপাদন, সংযোজন মিলিয়ে তাদের পণ্যের বহর এতটা সমৃদ্ধ যে মনে হয় কি নেই তাদের! কিন্তু এটুকু আসতে যেসব বাঁধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তা হল অভিজ্ঞতা এবং গ্রাহক সেবা। আমাদের দেশে ওয়ালটনের মত এমন অনেক কোম্পানি রয়েছে যাদের সুযোগ দিলে নিজ দেশ ছাপিয়ে বিশ্ব দরবারে তাক লাগিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এজন্য অ্যামাজন গুগলের মত বড় বড় কোম্পানি আমাদের বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে না।
যদি স্যামসাং, এলজি, হুয়াওয়ের মত বড় বড় কোম্পানিগুলোকে নিয়ে আলোকপাত করা হয় তাহলে দেখা যায় যে, কোন কোম্পানিরই সফলতার পথ মসৃণ ছিল না। তবে কোম্পানিগুলো মোটামুটি একটি পর্যায়ে পৌছানোর পর দক্ষিণ কোরিয়া, চীনের মত দেশ সরাসরি তাদের দেশের ছোট কোম্পানিকে দৈত্যে রুপান্তরের জন্য সহায়তা করেছে। এখনো চীনের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলার আন্তর্জাতিক টেন্ডারে অংশগ্রহণ, এবং টেন্ডার পাবার জন্য সরকারি ভাবে সহযোগিতা, প্রয়োজনে সরকারি ভাবে বিনিয়োগ করে চীনের কোম্পানিকে কাজ দেয়ার জন্য সেদেশের সরকার প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে।
মুলত, একটি ছোট কোম্পানিকে বিশ্বের বুকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে রুপান্তরের জন্য অবশ্যই সরকারের পলিসি সহযোগিতা এবং অন্যান্য সব ক্ষেত্রে স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত। বাংলাদেশ সরকার যদি এমন উদ্যোগ না নেয় তবে ভবিষ্যতে এদেশে অ্যামাজন গুগলের মত বড় কোম্পানি কখনও গড়ে উঠবেনা। স্যামসাং, এলজি, হুয়াওয়ে গড়ে উঠবেনা। যদি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আলোকপাত করি তাহলেও আমরা দেখতে পাব যে, সেদেশের সরকারও এ্যাপল, গুগলের মত কোম্পানির ব্যাবসায় কেন্দ্রিক স্বার্থ রক্ষার জন্য জাতীয় পর্যায়ে কাজ করে। অন্যদেশে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলির স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং ব্যাবসা প্রসারে সহযোগিতা করে।
এছাড়াও ভারতের আছে টাটা, মারুতি, মিত্তাল। তাইওয়ান এর আছে ASUS, HTC, ACER এর মত কোম্পানি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে আমরা এখনও এরকম কোন কোম্পানি দাড় করাতে পারিনি যারা ভবিষ্যতে বিশ্ব দরবারে তাক লাগিয়ে দিবে। যেমন- গার্মেন্টস শিল্পে বাংলাদেশ এখনো অবধি দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। কিন্তু ভাগ্য খারাপ না হলে, আগামী বছর বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে চলে যেতে পারে ভিয়েতনামের কাছে পরাজিত হয়ে। একবার ভেবে দেখুন তো, কেন এই পরাজয়?
এক্ষেত্রে, জাপানের একটি উদাহরন দেয়া যাক। জাপান পোশাক তৈরিতে বিশ্বের প্রথম সারির উৎপাদক দেশ নয়। কিন্তু তবুও জাপানিজ ব্র্যান্ড ইউনিকলো এই খাতে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি কোম্পানির একটি। সুইডেনের ক্ষেত্রেও রয়েছে এইচ এন্ড এম এর মত কোম্পানি যারা বর্তমানে গ্লোবাল লিডার। অথচ এসব দেশ গার্মেন্টস পণ্য কিনে থাকে বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের মত দেশের থেকে। তাহলে, এবার ভাবুন তো, কেন এমনটা হয়েছে? কেন আমরা দ্বিতীয় বৃহৎ গার্মেন্টস উৎপাদক হওয়া সত্ত্বেও এত বছরে একটা শক্ত ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে পারিনি? এর অন্যতম প্রধান একটি কারণ হল – সরকারি ভাবে ব্যাবসা করার সুযোগকে আমরা প্রসারিত করতে পারিনি। নীতিগত সমর্থন দিতে পারিনি কোম্পানিগুলোকে। এছাড়াও দেশের কোন কোম্পানির পক্ষ হয়ে বিদেশে তদবির করতে পারিনি। আর যেটা পারিনি, সেটা হল প্রকৃত ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিদেশে থাকা ব্যাবসায়ীক সুযোগ কাজে লাগাতে সাহায্য করে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত করতে।
মূলত ব্যাবসার ক্ষেত্রে একটি কোম্পানি তখনি বড় হতে পারবে যখন সেই কোম্পানি প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশ্ব দরবারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। তাই ব্যাবসার এই প্রক্রিয়াগুলোকে সহজ করা দরকার। সরকারকে দেশের ব্যাবসায়ীদের পক্ষে অন্য দেশের মত সাহায্য করা দরকার। এদেশে প্রযুক্তি খাত, গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যাল খাত সহ অনেক খাতে এমন অনেক কোম্পানি ছড়িয়ে আছে যাদের যোগ্যতা আছে গ্লোবাল প্লেয়ার হবার। এখন সময় চলে এসেছে রক্ষণশীল চিন্তা থেকে বের হয়ে এসে বিশ্বায়নের সুযোগ কাজে লাগানো। কারন আমরা সুযোগ কাজে লাগাতে যত দেরি করব, তাতে আমাদের প্রতিযোগীরা কিন্তু বসে থাকবে না। তারা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন করে এই প্রতিযোগিতায় তারা সম্মুখপানে এগিয়ে থাকবে। তাই আশা করব, এই প্রতিযোগীতার যুদ্ধে বাংলাদেশ ভিত্তিক কোম্পানিগুলিও ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে খুব তাড়াতাড়ি রুপ নিবে।