রাজধানীর ফুটপাত যেন চাঁদারহাট। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত একদিনেই উঠছে ৫ কোটি টাকার চাঁদা। ‘লাইন ম্যানদের’ মাধ্যমে তোলা চাঁদার এ টাকা যাচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, কিছু দুর্নীতিবাজ পুলিশ এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা গডফাদারদের পকেটে। গবেষণার তথ্য বলছে, অবৈধ এ টাকার জোরেই ফুটপাত কখনোই পুরোপুরি হকারমুক্ত হয় না।
বিক্রি কম হওয়ায় দোকানিরা কম টাকা দিলে শাসাতেও ছাড়ছেন না হানিফ। দোকান ভেদে কারো কাছে একশ’ কারো কাছে দুইশ’ টাকা তোলা হয়। কিন্তু টাকা দিতেই হবে। এবার হানিফের মুখোমুখি হওয়ার পালা।
বায়তুল মোকাররম, পল্টন ও মতিঝিল এলাকার প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার দোকানে টাকা তোলেন মিজান, হারুন ও জাহাঙ্গীর। দুপুরের পর থেকে অপেক্ষার পর সন্ধ্যায় দেখা গেল টাকা তোলা শুরু করেছে জাহাঙ্গীর। তবে ক্যামেরার সামনে তার দাবি এটা সমিতির টাকা যদিও সমিতির নাম বলতে পারেননি তিনি।
হকাররা বলছেন, টাকা না দিলে দোকান রাখা অসম্ভব।
তারা বলেন, লাইনম্যানরা টাকা তুলে নেয়। তারপর ভাগাভাগি হয়। ক্ষমতাসীন দল, ছাত্র সংগঠন সবাই এ টাকার ভাগ পায়। পুলিশও ভাগ পায়।
এসব কারণেই নিউমার্কেট ও গুলিস্তান এলাকায় সারাদিনই পুলিশ ও হকারদের মধ্যে চলে ইঁদুর বিড়াল খেলা। একপাশে তুলে দেবার পর অন্যপাশে বসে যান হকাররা।
সম্প্রতি ৭২ জন লাইনম্যানের নামে মামলা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু এ আসামিদের কাউকেই খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। যদিও অভিযোগ রয়েছে এরা সবাই রয়েছেন বহালতবিয়তে এবং করছেন সেই আগের লাইনম্যানের কাজ।
সম্প্রতি ব্র্যাকের একটি গবেষণা বলছে, ফুটপাতের এ বিপুল পরিমাণ চাঁদার রাজনৈতিক অর্ধনীতির কারণে ফুটপাত কখনোই পুরোপুরি হকারমুক্ত হয় না।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. শাহনেওয়াজ বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৫ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। যার পরিমাণ মাসে ১৫০ কোটি আর বছরে ১৮০০ কোটি টাকা।
গবেষণার তথ্য বলছে, ঢাকা শহরের প্রায় তিন লাখ হকারের এ চাঁদার পরিমাণ দুই সিটি কর্পোরেশনের বাজেটের সমান।