১০ই জানুয়ারী। ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডন হয়ে দেশে ফিরেছেন। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সংবাদ প্রচার হয়েছিল ৮ তারিখেই। তখন থেকেই বাংলাদেশের মানূষ ঘুমায়নি আর উল্লাসে ফেটে পরেছিল দেশের মানুষ। জয়বাংলা শ্লোগানে মুখরিত হয়েছিল সারা দেশ। রাত দিন প্রস্তুতি চলেছে বাঙালীর মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন দেশে বরনের। রমনা রেসকোর্সে (বর্তমান সরওয়ার্দী উদ্যান) মঞ্চ নির্মীত হয়েছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থ্যা তখন প্রায় অচল সমগ্র দেশেই তবুও মানুষ হেটে চলে এসেছে ঢাকায়। সেদিন ঢাকায় কোন গাড়ী ঘোড়া চলেনি। উল্লাসিত জনতার মিছিল ছিল শহরজুড়ে। সভাস্থল পুর্ন হয়ে গিয়েছিল সকালেই। রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর আগমনের বার্তা প্রচারিত হচ্ছিল প্রতি মুহুর্তের। বিমান বন্দরের আশপাশ এলাকায় শুধু মানুষ আর মানুষ। সভামঞ্চ থেকে উচ্চারিত শ্লোগান রেডিও আর টেলিভিশনের মাধ্যমে সারা দেশে প্রকম্পিত হয়েছে। রাস্তার দুই পাশের গাছেও মানুষ ঝুলে ছিল পাখীর মত নেতাকে এক নজর দেখার জন্য। রেডিওতেই শুনতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারি বিমান ঢাকায় অবতরনের খবর।
জনতার মিছিল সহ বঙ্গবন্ধুকে বহন করে সভা মঞ্চে নিয়ে এসেছে একটি ট্রাক। ৩ ঘন্টা সময় লেগেছে জনতার ভিড় ঠেলে সভামঞ্চে পৌঁছতে। বিশাল নৌকা আকৃতির মঞ্চে উঠে বঙ্গবন্ধু তার স্বভাবসুলভ কন্ঠে ” ভাইয়েরা আমার” বলতেই চিৎকারে ফেটে পরেছিল সভাস্থল। সিক্ত নয়ন আর বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে বঙালীর মহানায়ক সেদিন যে বক্তৃতা করেছিলেন তা ছিল তার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষন। এখন যেখানে শিশু পার্ক নির্মান করা হয়েছে (জেঃ জিয়া ইতিহাস মুছে ফেলতে শিশু পার্ক বানিয়েছেন স্থায়ী ইন্দ্রিরা মঞ্চটি ভেঙ্গে) সেখানে দাড়িয়ে বাঙালীর মহানায়ক সেদিন অবিস্মরনীয় বক্তৃতা করেছেন জাতীর সামনে। এই খানে দাড়িয়েই বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষন দিয়েছেন, স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন ৭১ এ।
১০ই জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতায় দুটি বিষয় স্পষ্ঠ হয়ে ফুটে উঠেছিলো (এক) নেতা শেখ মুজিব আর (দুই) রাষ্ট্রনেতা শেখ মুজিব। এই বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বিশ্বনেতারও মর্যাদা লাভ করেছেন। কোন বিষয়কে সেদিন বলতে ভুলেননি। শহীদদের কথা বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলেছেন, ভারতের কথা এবং বিশ্ব নেতাদের কথা বলেছেন। বিশ্বের মানুষ যারা বাংলাদেশের মুক্তিযূদ্ধকে সমর্থন করেছে তাদের কথাটিও কৃতজ্ঞতার সাথে বলতে ভুল করেননি। সরকারের নীতি, দেশের অবস্থা আর মানুষের দুর্দশার বর্ননা করেছেন। দেশের মানুষের সাথে একাত্ব হয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু সেদিন। মুজিবের কন্ঠশুনে লক্ষ লক্ষ স্বজনহারা মানুষের মনে শান্তনা জেগেছে, আশার স্বপ্ন দেখেছে বাঙালী। আরও অবাক কান্ড, বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত সব মনে রেখেছেন। বেঈমানী করেননি জনতার সাথে। আজ যে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ৭২ এর ১০ই জানুয়ারী দেশে ফিরেই সেই স্বপনের কথা বলে দিয়েছিলেন। ৭৫ এর পরে সামরিক শাসকরা এসে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপুরনে বাধা দিয়েছে। ইতিহাস বদলাতে চেয়েছে কিন্তু, ইতিহাস তার আপন স্রোতেই চলে। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশ রত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন পুরন করে চলেছেন। তবে, সেদিন বঙ্গবন্ধু ফিরে আসতে না পারলে কি হত তা ভাবা যায়না। ফাঁসির আদেশ কার্যকর করতে বঙ্গবন্ধুকে ইয়াহিয়া খান কনডেম সেলে রেখেছিলেন। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধী সেদিন বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি নিশ্চিত করেছিলেন। ১০ ই জনুয়ারী বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এক গুরত্বপুর্ন উজ্জ্বল মুহুর্ত। যেই দিনটি না এলে স্বাধীনতার লক্ষ্যটিও বদলে যেতে পারত। তাই,আজকের এই দিনে স্মরন করি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সালাম জানাই বিশ্বনেতা মুজিবকে। জয়তু মুজিব তোমাকে সালাম।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
টরন্টো, কানাডা
১০ই জানুয়ারী ২০২১।