গতকাল শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) শেষ হলো বইপ্রেমী মানুষের প্রাণের উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০। শেষ হলো বই সংস্কৃতির মিলনমেলা। রাত ৯টায় গেট বন্ধ হওয়া পর্যন্ত প্রায় সারাক্ষণই ছিল বিপুল বইপ্রেমী মানুষের বাঁধভাঙা ভিড়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানায়, মেলায় এ বছর একাডেমির হিসেবে বই বিক্রি হয়েছে ৮২ কোটি টাকার। গত বছর বিক্রি হয়েছে ৮০ কোটি টাকার বই। তার আগের বছর ২০১৮ সালে মেলায় বই বিক্রি হয়েছিল ৭০ কোটি টাকার।
গতকাল বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ৪৯১৯টি। এ বছর সর্বোচ্চ বই প্রকাশিত হয়েছে কবিতার। সংখ্যার হিসাবে ১৫৮৫টি। এ ছাড়া এ বছর গল্প ৬৪৪, উপন্যাস ৭৩১, প্রবন্ধ ২৭১, গবেষণা ১১২, ছড়া ১১১, শিশুতোষ ২০৩, জীবনী ১৪৯, রচনাবলি ৮, মুক্তিযুদ্ধ ১৫২, নাটক ৩৪, বিজ্ঞান ৮৩, ভ্রমণ ৮২, ইতিহাস ৯৬, রাজনীতি ১৩, স্বাস্থ্য ৩৬, রম্য ৪০, ধর্মীয় ২০, অনুবাদ ৫৭, অভিধান ১৪, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ৬৭, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বই ১৪৪ এবং বিবিধ বিষয়ে বই প্রকাশিত হয়েছে ২৬৮টি। বাংলা একাডেমির বিচারে মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা ৭৫১টি।
মেলায় শিশুদের স্টলগুলোতে ছিল শিশু ক্রেতাদের ভিড়। কেউ কিনেছেন ভূতের বই, কেউবা ছড়া, আবার কেউ কেউ সব স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। আগতদের প্রায় প্রত্যেকে কিনেছেন নতুন বই।
অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই বছরজুড়েই পাঠক বই কিনুক, পড়ুক। বইমনস্ক সমাজ গড়ে তোলার জন্য, সমৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য তা একান্ত প্রয়োজন।’
সন্ধ্যায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০-এর সমাপনী অনুষ্ঠান মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বাংলা একাডেমি পরিচালিত চারটি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০’ এর সদস্যসচিব ড. জালাল আহমেদ।
২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘অভিযান’ (এক ইউনিট), ‘কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড’ (২-৪ ইউনিট) এবং ‘বাংলা প্রকাশ’কে (প্যাভেলিয়ন) শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হয়।
২০১৯ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিকসংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ‘কথাপ্রকাশ’ কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, ২০১৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে আবুল হাসনাত রচিত ‘প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য’ গ্রন্থের জন্য ‘জার্নিম্যান বুকস’, মঈনুস সুলতান রচিত ‘জোহানেসবার্গের জার্নাল’ গ্রন্থের জন্য ‘প্রথমা’ প্রকাশনকে এবং রফিকুন নবী রচিত ‘স্মৃতির পথরেখা’ গ্রন্থের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশনসকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হয়।
২০১৯ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডকে রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অন্যদিকে বাংলা একাডেমি পরিচালিত সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৮ পান কথাসাহিত্যিক সালমা বাণী ও সাগুফতা শারমীন তানিয়া। সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। গতকাল একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
সূত্র: বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ।