“ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো” বিস্তারিত আলোচনা
ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসিত একটি প্রশ্ন “ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো”। ফ্রিল্যান্সিং কি এই বিষয়ে আমরা সবাই কম বেশি জানি কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো সে বিষয়ে আমরা অনেকেই এখনো জানি না। গত এক দশক ধরে পত্রিকা, টেলিভিশন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া সবখানেই ট্রেন্ডিং টপিক ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং।
করোনার এই মহামারী সময়ে, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো এ বিষয়ে জানার আগ্রহ এবং ফ্রিল্যান্সার দুই-ই ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্রিল্যান্সাররা লক্ষ টাকা আয় করে এমন গল্প আমরা রোজ শুনি, আর তাই এই বিষয়টার প্রতি আগ্রহেরও কমতি নেই আমাদের। এখন একটাই প্রশ্ন, কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখবো? কেউ আবার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফ্রিল্যান্সিং কি, ফ্রিল্যান্সিং শেখার উপায় নিয়ে বই পর্যন্ত লিখে ফেলেছেন। বাজারের সেসব বইয়ের অনেকগুলোই আপনার ফ্রিল্যান্সিং এর প্রতি আগ্রহ ধূলিসাৎ করার জন্য যথেষ্ট। প্র্যাক্টিক্যাল আর পুঁথিগত বিদ্যার পার্থক্যটা আমাদের এসব মহান বুদ্ধিজীবিরা প্রায়ই ভুলে যান।
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো?
বহুল আলোচিত এই বিষয়টি মাথায় রেখে আজ আমরা আপনাদের সম্মুখে উপস্থাপন করব ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো। আজকে আমরা ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শেখা যায়, কিভাবে সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায় প্রভৃতি বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। তবে তার আগে আমাদের যা জানতে হবে তা হলো ফ্রিল্যান্সিং আসলে কি!
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে নিজের ইচ্ছামত যেখানে খুশি সেখানে থেকে কাজ করা। আর এজন্য আপনাকে কোনো সিভি জমা দিতে হয়না কিংবা করতে হয়না ৯টা-৫টা’র অফিস। ফ্রিল্যান্সাররা “নিজের বস নিজে” হয়। ধরুন কোনো একটা নতুন কোম্পানি বাজারে আসলো। এখন তাদের বেশ কিছু জিনিসের প্রয়োজন। বিশেষ করে লোগো ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, কার্ড ডিজাইন, প্রোডাক্ট ডিটেইলস, বিজ্ঞাপন কপিরাইটিং, কনটেন্ট, ফটোগ্রাফস ইত্যাদি।
অনলাইন মার্কেটেপ্লেসে যারা এক্সপার্ট তারা চুক্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কাজগুলো চুক্তিভিত্তিক করে থাকে। আর্টিকেল বা ব্লগ লেখকরা রাইটিং এর কাজটা করে, ওয়েব ডেভেলপার সাইট ডেভেলপমেন্ট আর ডিজাইনাররা কার্ড বা লোগো ডিজাইনের কাজ করে। কাজ শেষে ক্লায়েন্ট তার একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে দেয়। এখানে সুবিধা হলো, কোম্পানীর Employee খুঁজতে হলোনা, কিংবা ইনভেস্ট করে তাদের প্রতিমাসে বেতনও দিতে হচ্ছেনা। অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সারও তার এই কাজ ঘরে বসেই শেষ করতে পারলো। এবং তার দক্ষতার জন্য কাজেরও অভাব হবেনা।
ফ্রিল্যান্সিং পেশায় কী কী কাজ করা যায়?
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো বা শুরু করব তা নিয়ে ভাবছেন? ফ্রিল্যান্সিং শিখার প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কোন বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এই যে আমি আর্টিকেল লিখছি এটা আমার আগ্রহের জায়গা। আপনিও যদি লেখালেখি করতে চান তাহলে ব্লগ বা আর্টিকেল রাইটার হিসেবে শুরু করে দিন। কিংবা আপনি যদি এম.এস ওয়ার্ড, এম.এস এক্সেল বা পাওয়ার পয়েন্টের স্লাইড তৈরির কাজ করতে পারেন তাহলে আপনি এই সার্ভিসটাও দিতে পারেন। আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং পারলে ক্লায়েন্টের ওয়েবসাইট এর লোগো ডিজাইন করে দিতে পারেন। কোডিং পারলে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করতে পারেন।
উপরের আলোচনা টি খেয়াল করলে দেখবেন যে, শুধুমাত্র ডিজাইন ক্যাটাগরিতে কত শত রকমের কাজ পাওয়া যায়। তাই আপনার পছন্দের কাজ খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট হবে না।এছাড়াও ফ্রিল্যান্স মার্কেটগুলোতে সাধারণত যেসব কাজ বেশি পাওয়া যায়, তা হলোঃ আর্টিকেল রাইটিং এসইও ট্রান্সলেট অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট মার্কেটিং ছবি এডিট ভিডিও ইডিটিং অনলাইন টিউটরিং কীওয়ার্ড রিসার্চ ডাটা এনালাইসিস কপি রাইটিং প্রুফ রিডিং এনিমেশন তৈরি, ইত্যাদি
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কোন কাজের চাহিদা বেশি?
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো এ প্রশ্নের পরে সবচেয়ে সমালোচিত একটি ভুল প্রশ্ন হল- “ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কোন কাজের চাহিদা বেশি?”। আচ্ছা, কখনো ভেবে দেখেছেন কি, যে কাজের চাহিদা যত বেশি হবে সে কাজে প্রতিদ্বন্দীতাও কি তত বেশি হবে না! আবার ধরুন যে, ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা খুব বেশি, অথচ আপনি তা জানেন না! তাহলে কি এখন ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার পিছনে পড়ে যাবেন?
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সফল হতে হলে আপনার নিজের কাজ ও দক্ষতার উপর জোর দিতে হবে, আপনার পাওয়া কাজগুলো ভালোভাবে ডেলিভারী করতে হবে। নিজেকে Top Rank এ নিয়ে করার চেষ্টা করুন। মার্কেটপ্লেসে শুধুমাত্র চাহিদা সম্পন্ন কাজের গিগ প্রকাশ করলেই কাজ পাওয়া যায় না। আপনি যে কাজে অভিজ্ঞ, যা করতে পছন্দ করেন, এবং চাহিদাও রয়েছে এমন কাজের প্রতি লেগে থাকেন। হ্যাঁ, সেই সাথে বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অন্য দশজনের তুলনায় নিজেকে এগিয়ে রাখতে অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করার চেষ্টা করতে পারেন।
সফল ফ্রিল্যান্সার হবার কৌশল
খুব সহজে করা যায় এমন কোনো কাজ শিখা উচিত নয়। কারণ যে কাজটা খুব সহজে করা যায় তার মুল্য কিন্তু বেশিদিন থাকেনা। তাই আপনি যেই কাজটা শিখতে চান তার ভবিষ্যৎ কি সেটা আগে ভেবে নিবেন। কিছুদিন পরেই যদি সে কাজের ডিমান্ড আর না থাকে তখন কিন্তু আপনাকে আবার নতুন করে কাজ শিখতে হবে তখন হয়তো আপনি উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলবেন। সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার ইচ্ছা থাকলে কাজ শেখার ক্ষেত্রে যেটা সহজ কেবল সেটাকেই প্রাধান্য দিবেননা। যেটা কঠিন কাজ সেটা কিন্তু খুব বেশি মানুষ করেন না, তাই ওই কাজটা শিখা কিন্তু আপনার জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট। এডভান্স লেভেলের কাজ শিখলে আপনি সারাজীবন নিশ্চিন্তে কাজ করে যেতে পারবেন। একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য নিচের কাজগুলো করা জরুরী।
১। বিষয় বস্তু নির্ধারণ
ফ্রিল্যান্সিং শেখার প্রাইমারি লেভেলে অনেকে একসাথে অনেকগুলো বিষয় কে একই সময়ে আয়ত্ত্ব করার চেষ্টা করেন। অনেক বিষয়ে একসাথে পারদর্শী হওয়াটা ভুল নয়। আপনি যত খুশি তত কাজ শিখুন সেটা কোনো সমস্যা নয় তবে কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে করতে হবে। আমি সব শিখে ফেলবো এইধরনের মনোভাব বর্জন করতে হবে। একটা বিষয়েই প্রথমে কাজ শেখাটা নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। সেই বিষয়ে যখন আপনার আয়ত্ত আসবে তখন আরেকটা কাজ শিখবেন।
২। ট্রেনিং / কোর্স করা
বিষয়বস্তু বা আপনি কোন বিষয় নিয়ে কাজ করবেন, তা ঠিক করার পর আপনার মূল লক্ষ্য হবে সে বিষয়ে পারদর্শীতা অর্জন করা। এখন নিশ্চয় ভাবছেন, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো, কোথায় ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করবেন? সাধারণত আপনি চাইলে অফলাইন বা অনলাইন যে কোনভাবে কোর্স বা ট্রেনিং করতে পারেন।
অফলাইন ফ্রিল্যান্সিং আপনার ইউনিয়ন পরিষদ, কিংবা আশে পাশের শহরে অনেক ট্রেইনার ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট পেয়ে যাবেন, যেখানে আপনার পছন্দের বিষয়ের উপর আপনি কাজ শিখতে পারবেন। আর অনলাইনেও ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করার জন্য অনেক মাধ্যম আছে। অনলাইন কোর্স করার সাইট গুলোতে (ফ্রি+পেইড), পার্সোনাল ট্রেইনার প্রভৃতি মাধ্যমে Freelancing শিখতে পারবেন।
৩। ইন্টার্নশীপ
একজন ক্লায়েন্ট এর কাজ করতে হলে কি কি তথ্য জানতে হবে। আর কোন কোন কাজ করতে হবে তা আপনাকে বুঝতে হবে।
ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করার বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে জানতে হলে ইন্টার্ন করাটা জরুরী। বর্তমানে অনেক কোম্পানি আছে যেখানে ইন্টার্ন করা যায়। প্রয়োজনে ফ্রিতে ইন্টার্নশীপ করুন। ভবিষ্যতে ক্লয়েন্ট ডিলিং এ প্রচুর ফায়দা পাওয়া যাবে।
৪। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট তৈরি
অনেকে করে কি কাজ শিখে শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে এরপর অনলাইন মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট তৈরি করে। যার কারণে হয় কাজ জেনেও কাজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আপনার উচিত কাজ নিয়ে মোটামুটি একটা ধারণা হয়ে গেলে ফ্রিল্যান্সিং সাইটে একাউন্ট তৈরি করা এবং সুন্দর প্রোফাইল টা সাজিয়ে নেয়া। আর অল্প সময় এর জন্য হলেও নিয়মিত একটিভ থাকার চেষ্টা করা। এতে করে আস্তে আস্তে আপনার গিগটি র্যাঙ্কে আসতে শুরু করবে।
৫। সময়মতো ডেলিভারী দিন
বাইরের দেশের ক্লায়েন্ট কাছে সময়ের মূল্য সত্যিকার অর্থেই অনেক বেশি। সুতরাং, তাদেরকে দেরি করে কাজ দিলে সমস্যা নেই তা ভেবে বসবেন না। আপনার কাজ করতে যতটুকু সময় লাগবে, প্রয়োজনে তারচেয়ে একটু বেশি সময় রাখুন আপনার গিগে। কিন্তু যেদিন আপনি কাজটি ডেলিভারী দিতে চেয়েছেন, সেটা যেন কোনভাবেই মিস না হয়।
৬। রেটিং চেয়ে নিন
ক্লায়েন্ট আপনার কাজে খুশি হলে সে নিজ থেকেই রেটিং দিয়ে দিবে। তবে তারা ব্যস্ততার কারণে হয়তো অনেক সময় রেটিং দিতে ভুলে যান। এরকম হলে তাকে অনুরোধ করুন যেন সে অনুগ্রহ করে আপনাকে রেটিং দেয়। তবে একটা বিষয়, আপনি সরাসরি রেটিং চাইলে মার্কেট প্লেস থেকে আপনাকে ব্যান করে দিতে পারে। তাই আপনাকে ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে রেটিংটা নিতে হবে খুব টেকনিক্যালি। কারণ, এই রেটিংই অন্যান্য ক্লায়েন্ট থেকে কাজ পেতে সাহায্য করবে আপনাকে। আর পরবর্তীতে আপনার চাহিদা, কাজের মূল্য বৃদ্ধি পাবে যদি প্রতিনিয়ত ভালো রেটিং পেতে থাকেন।
শেষ কথা
আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে গেছেন।