আধুনিক জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম বা প্রয়োজনীয় শারীরিক কসরতের অভাবে যে সব অসুখ সহজেই শরীরে বাসা বাঁধে তার অন্যতম ফ্যাটি লিভার। সহজে এই অসুখের লক্ষণ বোঝার উপায়ও থাকে না। চিকিত্সকদের মতে, আমাদের প্রত্যেকের লিভারেই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে চর্বি থাকে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত চর্বি জমে গেলে তা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ভাস্করবিকাশ পালের মতে, ‘‘অনেকেরই ধারণা, কেবলমাত্র মদ্যপানের অভ্যাস থেকেই বোধ হয় এই অসুখ হয়। কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। চিকিৎসকদের মতে, ফ্যাটি লিভার দুই রকম। অ্যালকোহলিক ও নন-অ্যালকোহলিক। মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান থেকে লিভারে চর্বি জমলে তা অ্যালকোহলিক ফ্যাট। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি মূলত খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত তেল, ফ্যাট জাতীয় উপাদান বেড়ে গেলে হয়। কখনও কখনও নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বংশগত কারণেও হতে পারে।’’ তবে সময় মতো সতর্ক না হলে এই ফ্যাটি লিভারের হাত ধরেই হানা দিতে পারে লিভার সিরোসিস। লিভার তার নিজস্ব কর্মক্ষমতা হারিয়ে মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দিতে পারে। তবে চিকিৎসকদের মতে, মদ্যপানের কারণে লিভারে চর্বি জমলে তা নিরাময়ের আবশ্যিক উপায় মদ্যপান বন্ধ করা ও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলা। কিন্তু নন-অ্যালকোহলিকদের ক্ষেত্রে সব সময় ওষুধ না খেয়ে ঘরোয়া কিছু সুঅভ্যাসেও অসুখ রুখে দেওয়া যায়। প্রয়োজনীয় শরীরচর্চা যেমন দরকার, তেমনই খাদ্যাভ্যাসেও তেল-মশলা কমানো উচিত। ফ্যাট জাতীয় খাবারেও রাশ টানা দরকার। এর সঙ্গে প্রতি দিনের দু’-একটি অভ্যাস আয়ত্তে আনতে পারলে লাভ আপনারই। ১/অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার এই অসুখের অন্যতম সেরা সমাধান। লিভারের দু’পাশে জমে যাওয়া চর্বি ঝরিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করে এটি। প্রতি দিন খালি পেটে এক গ্লাস গরম জলে দু’ চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে তা খান। আরও ভাল ফল পেতে এতে মধু মিশিয়েও নিতে পারেন। অ্যাপেল সিডার ভিনিগার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের কাজ করে। ২/গরম জলে লেবু-মধুর মিশ্রণ কেবল শরীরের চর্বিই ঝরায় না, লিভারের পাশে জমে থাকা চর্বিকেও দূর করতে তা সক্ষম। শরীরের টক্সিন বার করে দেওয়ার প্রাকৃতিক ক্ষমতা রয়েছে লেবুর। এর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও লিভারের চর্বি গলাতে সাহায্য করে। ‘‘তবে এই দু’টি পানীয় রোজ খাচ্ছি ভেবে খাদ্যতালিকায় তেল-ঝাল বাড়িয়ে চললে কিন্তু চলবে না, বরং এই দুই পানীয়র সঙ্গে খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চাতেও মন দিলে সুস্থ থাকবেন অনেকটাই।’’— জানালেন ভাস্করবিকাশ পাল।