তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: ফেসবুকে প্রেম করে খুলনার মেয়েকে বিয়ে ও পরে ভারতে পাচারের পর আটকে ধর্ষণ ও মানব পাচার মামলার প্রধান আসামি সোহেল মিয়াকে (২৭) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-৯। মঙ্গলবার (২৪ মে) বেলা ১০ টায় মৌলভীবাজার সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র্যাব-৯ সিপিসি-১ হবিগঞ্জ ক্যাম্পের একটি দল।
আটককৃত সোহেল মিয়া নবীগঞ্জ উপজেলার বেতাপুর গ্রামের কিবরিয়া আহমদের ছেলে।
মঙ্গলবার দুপুরে র্যাব-৯ সিপিসি-১ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ক্যাম্প কমান্ডার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান।
এর আগে ফেসবুক থেকে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার সোহেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয় নুর নাহার (ছদ্মনাম)। এরপর তাকে বিয়ে করে কৌশলে ভারতীয় পাচারকারীর হাতে তুলে দেন সোহেল। ভারতে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাকে একাধিকবার পাচারদলের সদস্যরা ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন সেই নারী।
এ ঘটনায় গত শনিবার দিনভর পাটগ্রাম থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাচারদলের সদস্য আশরাফুল ইসলাম, মোকছেদুল হক, চম্পা বেগম নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন পাটগ্রাম থানার ওসি ওমর ফারুক। তিনি বলেছিলেন, এ ঘটনার মুল হোতা সোহেল মিয়া হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বেতাপুর গ্রামের কিবরিয়ার পুত্র।
পাটগ্রাম থানা সূত্রে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ৩ বছর পূর্বে টিকটক করতে গিয়ে পরিচয় ও প্রেম হয় তাদের। পরে প্রেমিক হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বেতাপুর গ্রামের কিবরিয়ার পুত্র সোহেল এবং প্রেমিকা নুর নাহার (ছদ্মনাম) অবৈধ ভাবে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ।
সেখানে প্রেমিকা নুর নাহারকে দিয়ে জোর পূর্বক দেহ ব্যবসা করার চেষ্টা করান সোহেল। কিন্তু নুর নাহার বিষয়টি বুঝতে পেয়ে সোহেলের সঙ্গে ঝগড়া করেন। পরে ৮/৯ মাস পর ভারতের কলকাতা থেকে কৌশলে একই পথে দেশে পালিয়ে আসে প্রেমিকা নুর নাহার (ছদ্মনাম)। তার কিছুদিন পর দেশে আসেন সোহেল। অনেক বুঝিয়ে তাকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ আদালতে সোহেল-প্রেমিকা নুর নাহার (ছদ্মনাম) বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর নুর নাহার গর্ভবতী হন।
তবে আবারও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করেন প্রেমিক থেকে স্বামী হওয়া সোহেল। নুর নাহারকে পাচারের জন্য আবারও পাচারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পাঠিয়ে দেয় স্বামী সোহেল। এরপর গত ১৩ মে ভোরে পাচারকারীরা তাকে ওই উপজেলার দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে দেয়। এ সময় নুর নাহারকে ধর্ষণ করেন ওই পাচার দলের সদস্য মোকছেদুল।
নুর নাহার ভারতে প্রবেশের পর বুঝতে পারেন তার স্বামী তাকে আবারও পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে আবারও নুর নাহার কৌশলে ১৫ মে রাতে দেশে দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ফিরে আসেন। তবে দেশে ফেরার পর আশরাফুল ইসলাম নামে অপর এক পাচারকারী দলের সদস্য তাকে ধর্ষণ করেন। এরপর টাকার জন্য নুর নাহারকে আটকিয়ে রাখেন পাচার দলের সদস্যরা। তবে সেখান থেকেও কৌশলে পালিয়ে পাটগ্রাম থানায় আশ্রয় গ্রহণ করে নুর নাহার।