বিদ্যুৎ খাতে অনেক বছর ধরেই ৫০ শতাংশ হিসাবে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। উৎপাদন থেকে গ্রাহক পর্যায় পর্যন্ত সরবরাহ করতে খরচ হয় ১২ টাকা। কিন্তু গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া হয় ৬ টাকা। ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে গত বছর তিন দফায় ১৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল সরকার। এবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আরো ৫ শতাংশ বাড়াচ্ছে সরকার। বিদ্যুৎ বিভাগ এরই মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছে। যেকোনো সময়ই চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।
এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নাভিশ্বাস অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে বছরের শুরুতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ জনগণের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি কোনো সঠিক সমাধান নয়। মূল্যস্ফীতির এই সময়ে মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে কেবল আর্থিক বোঝার চাপই বাড়াবে।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টদের দাবি, বিদ্যুতের ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ এবং বিক্রির মধ্যে ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে যাচ্ছে সরকার।
সম্প্রতি সচিবালায়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ডলারের দাম এত বেশি বেড়ে গেছে যে, জ্বালানির দাম সহনীয় থাকলেও লোকসান হচ্ছে। সেজন্য দাম সমন্বয় করা হবে। তবে দাম খুব সামান্য বাড়তে পার। লাইন গ্রাহকের (৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী) মাসের বিল ২০ টাকার মতো বাড়তে পারে। এখন তারা যদি একটু সাশ্রয়ী হন, তাহলে বিল আগের অবস্থায় থাকবে। একটু বাড়বে। গ্রাহকদের মিতব্যয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করাই আমাদের লক্ষ্য। ১ কোটি ৪০ লাখ গ্রাহক রয়েছে, যাদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৪ টাকার মতো নেয়া হয়। সেখানে হয়তো ৩০ থেকে ৩৫ পয়সার মতো বাড়তে পারে। তবে যারা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, বাসায় দুই থেকে ৩টি এসি ব্যবহার করেন, তাদের বিল ৭০ পয়সার মতো বাড়তে পারে। তাদের মাসের বিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়ে গেলে কোনো সমস্যা হবে না।
এদিকে, এবারও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২০০৫ সালে কমিশন গঠন হওয়ার পর থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি গ্রাহক পর্যায়ে গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে আসছিল। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, নির্বাহী আদেশেই দাম সমন্বয় করা হবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে দিলে ৩ মাস সময় লাগত। এতে ৩ মাসে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হতো।
বিদ্যুতে ভর্তুকির হার শূন্যে নামাতে গত মাসে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বাল্ক মূল্যহার ৮০ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠায় বিদ্যুৎ বিভাগে। বিতরণ কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর লোকসান শূন্যে নামাতে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে তারা। প্রস্তাবে বলা হয়, বিতরণ কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর বর্তমান গড় ট্যারিফ ৮ টাকা ২৫ পয়সা। তবে বিদ্যমান বাল্ক (ছয় টাকা ৭০ পয়সা) ট্যারিফে ভারিত গড়ে তারা ৫৫ পয়সা বা ছয় দশমিক ৬১ শতাংশ ঘাটতিতে রয়েছে। এর সঙ্গে বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধি করলে তাদের লোকসান আরও বাড়বে। তাই লোকসান শূন্যে নামাতে বাল্কের পাশাপাশি খুচরা পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রয়োজন। প্রস্তাবে আরো বলা হয়, ভর্তুকি শূন্যে নামাতে বাল্ক মূল্যহার ছয় টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ১১ পয়সা করতে হবে। এর সঙ্গে বিতরণ লস, বিতরণ কোম্পানিগুলোর পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় যুক্ত করলে খুচরা মূল্যহার ভারিত গড়ে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা করতে হবে। এতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর লোকসান শূন্য হবে। এজন্য গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যহার গড়ে ছয় টাকা ৪৩ পয়সা বা প্রায় ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে।
এদিকে এই প্রস্তাব কার্যকর করলে ভর্তুকি শূন্যে নামাতে ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে পাঁচ শতাংশ হারে বাল্ক মূল্যহার বাড়াতে হবে। এতে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে বিদ্যুৎ খাতে কোনো ভর্তুকি দিতে হবে না। এক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যমান ঘাটতি পূরণসহ মূল্যহার ফেব্রুয়ারিতে ১১ শতাংশ বাড়াতে হবে। এরপর মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার শতাংশ হারে এবং ডিসেম্বরে ১০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে হবে।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৩:২৩ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি