অলিউর রহমান নয়ন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে বাবা মায়ের সাথে পাচারকারী দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে নদী সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে ফেরার সময় বিএসএফের ধাওয়ায় পানিতে ডুবে নিখোঁজ দুই শিশুর লাশ নীল কমল নদী থেকে উদ্ধার করেছে ভারতীয় বিএসএফ।
গতকাল রবিবার সকালে উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্ত এলাকার ৯৪৩ নম্বর আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার থেকে পঞ্চাশ গজ ভারতের ভিতরে নীল কমল নদীতে স্থানীয়রা লাশ ভাসতে দেখে। খবর পেয়ে ভারতীয় সেউটি ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য ও সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ দুপুর ১২ টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে ভারতে নিয়ে যায়। নিহত শিশু দুটির নাম পারভীন (৮) ও সাকিবুর (৪)। তারা কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম সুখাতি গ্রামের রহিচ উদ্দিন (৩৮) ও সামিনা বেগম(৩৫) দম্পতির সন্তান।
এদিকে প্রায় ১৬ বছর আগে রহিচ উদ্দিন ও তার স্ত্রী সামিনা বেগম কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতে যান। সেখানেই তাদের দুই সন্তানের জন্ম হয়। বাবা- মা বাংলাদেশী হলেও শিশু দুটির জন্ম ভারতে হওয়ায় তাদের বাংলাদেশী নাগরিকত্বের কোন প্রমাণপত্রও দেখাতে না পারায় বিজিবির কাছে হস্তান্তর না করে শিশু দুটির লাশ ভারতে নিয়ে যায় বিএসএফ।
স্থানীয়রা জানান, ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সুলতানপুর এলাকার হাসিহেসা ইট ভাটায় কাজ শেষে দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য শুক্রবার রাতে স্ত্রী ও দুই সন্তান সহ কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার সেউটি সীমান্ত এলাকায় আসেন রহিচ উদ্দিন। এ সময় পাচারকারী দালালরা কাঁটাতারের বেড়া কেটে তাদেরকে নীল কমল নদীর পাড়ে নোম্যান্স ল্যান্ড এনে দাঁড় করিয়ে রেখে নদী সাঁতরে বাংলাদেশে আসতে বলে। এ অবস্থায় লোকজনের শব্দ শুনে ভারতীয় সেউটি ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যরা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে তাদের ধাওয়া করে। অবস্থা বেগতিক দেখে দুই সন্তানকে নিয়ে নদী সাঁতরাতে শুরু করেন সামিনা বেগম। কিন্তু তীব্র স্রোতের মধ্যে হাতের বাঁধন খুলে ডুবে যায় দুই শিশু। ডুবে যাওয়ার দুই দিন পর রবিবার সকালে তাদের লাশ ভেসে উঠে।
রহিচ উদ্দিন জানান , পরিবার নিয়ে নিরাপদে দেশে ফেরার জন্য ভারতের দালালদের সাথে ৩০ হাজার টাকা চুক্তি করি। তারা আমাদেরকে সীমান্তে এনে অন্য ২০/২৫ জন নারী,পুরুষ ও শিশুর সাথে একটি বাড়ীতে রাখে । শুক্রবার মধ্য রাতে কাঁটাতারের বেড়া কেটে তারা আমাদেরকে নদীর পাড়ে নিয়ে আসে । এ সময় বিএসএফ ধাওয়া দিলে দালালরা দ্রুত নদী পার হতে বলে। আমি ব্যাগ নিয়ে সাঁতার দেই আর আমার স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে নদী সাঁতরাতে শুরু করে। কিন্তু অন্ধাকারে তীব্র স্রোতের বেগে স্ত্রীর হাত থেকে সন্তানরা নিখোঁজ হয়। এরপর পানিতে ডুবে অনেক খোঁজা খুজি করেছি কিন্তু সন্ধান পাইনি।
এ প্রসঙ্গে লালমনিহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধীন কাশিপুর কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার কবির হোসেন বিএসএফ কর্তৃক লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের বাংলাদেশী নাগরিকত্বের প্রমাণপত্রও দেখাতে না পারায় বিএসএফ শিশু দুটির লাশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।