অলিউর রহমান নয়ন, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৫ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুবাদে এ সকল বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। ফলে বিদ্যালয় খোলার পর কমে গেছে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ।
বিদ্যালয় সুত্র জানায়, ওই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৪৫ জন। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ২ জন, সপ্তম শ্রেণীতে ১১ জন , অষ্টম শ্রেণীতে ১৭জন, নবম শ্রেণীতে ২৮ জন, দশম শ্রেণীতে ১৪ জন এবং চলতি বছরের এস এস সি পরীক্ষার্থী ১৩-১৫ জন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছে না।
পরে খোজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের সকলের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা এখন স্বামীর বাড়ীতে ঘর- সংসার করছে।
সুত্র আরও জানায়, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আগে প্রতিদিন গড়ে ৭০থেকে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হলেও বর্তমানে উপস্থিতির সংখ্যা ৪০-৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুপুর, আশামনি, নাছিমা, আতিকা খাতুনসহ অনেকেই জানায়, ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলার দিনে ১৭ জন বান্ধবীর বিয়ে হওয়ার খবর শুনে তাদের সকলের মন খারাপ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয় খোলার
আনন্দ ম্লান হয়ে যায় সহপাঠিদের বিয়ের খবরে।
বাল্যবিয়ের শিকার নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বিথী খাতুনের বাবা ভ্যান চালক বাদশা মিয়া বলেন , আমরা গরীব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। মেয়ে বড় হয়েছে, কখন কি হয় তাই ভালো সমন্ধ পাওয়ায় মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি।
বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহা: মতিউর রহমান খন্দকার জানান, বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর বাড়ী গিয়ে খোঁজ নিয়ে তাদের বাল্য বিয়ের খবর জানা গেছে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা পড়াশুনা থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। এই সুযোগে পরিবার তাদের বাল্যবিয়ে দিয়েছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.আব্দুল হাই জানান, বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাল্যবিয়ের তথ্যটি পেয়েছি। এ উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের মোট ৭৩ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস জানান, বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের বিষয়টি শুনেছি। বাল্যবিয়ে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরণের প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে আমরা কাছ শুরু করেছি।