দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভিজিডির চাল বিতরণে অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উপকারভুগিদের। ভিজিডির চালের ডিও উত্তোলনের পরেও দীর্ঘদিন ধরে ভিজিডির কার্ডধারী বেশকিছু ভাতাভোগীর কার্ডের বিপরীতে তাদের প্রতি মাসের বরাদ্দকৃত চাল সময় মতো বিতরণ না করে ফেলে রাখাসহ উপকারভোগীদের নাম তালিকায় থাকা সত্বেও তাদেরকে কার্ড না দিয়ে চাল আত্মসাত্বের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ৭নং শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মামুনুর রশীদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছে ভুক্তভুগিরা।
ভিজিডি চক্রে ২০২১-২০২২ অনলাইন তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ৭নং শিবনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো: মামুনুর রশীদ চৌধুরী বিপ্লব তাদের কার্ড দেননি বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন জোসনা, নাছিমা মরজিনা, ছালেহা, নুরবানুসহ একাধিক ভূক্তভোগী। কার্ড নিয়ে প্রতারণার শিকার ভূক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও এখন পর্যন্ত কোন প্রতিকার না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন । বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাক্ষরিত উপজেলা (বিএমডিএ) সহকারী প্রকৌশলী মো: রেজাউল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, কিন্তু তদন্ত কমিটির প্রধানের বদলী জনিত কারনে তদন্তটি পিছিয়ে পড়ে।
ভিজিডির উপকারভোগী মহিলা তালিকার শিবনগর ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের চককবির পালপাড়া গ্রামের গরীব অসহায় গজেন চন্দ্রের স্ত্রী সুবাসীনি রানী, একই ওয়ার্ডের মো: ছাইমুন এর স্ত্রী উপকারভোগী বিউটি রানী,৮নং ওয়ার্ডের মো: নুর হোসেন এর স্ত্রী মোছা: রুবিনা বেগম, একই ওয়ার্ডের মৃত মহিদুল এর স্ত্রী গোলাপী বেগম, নাছিমা বেগম, ছালেহাসহ অনেকেই জানান, ভিজিডি চক্রের ২০২১-২০২২ অনলাইন তালিকায় তাদের নাম থাকলেও এখননো কার্ড পায়নি তারা একবারও চাল দেয়া হয়নি তাদের। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে দিনের পর দিন ধরণা দিয়ে কোন কুল কিনারা না পেয়ে গত ৩রা জুন তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরেও কোন ফল পায়নি তারা।২০২১-২০২২ অনলাইন তালিকায় নাম থাকা ৪৪০জন উপকারভোগীদের ভিজিডি কার্ড নিয়ে সঠিক তদন্ত করা হলে ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডেই সঞ্চয়ের টাকা চেয়ারম্যানের পকেটে রেখে দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠবে এমন অভিযোগ ভূক্তভোগীদের।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মিরা নড়েচড়ে বসলে, তড়িঘড়ি করে গত বুধবার চাল বিতরণ করেন ৭নং শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মামুনুর রশীদ চৌধুরী বিপ্লব, খবর পেয়ে সরেজমিনে শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা মেলে, পরিষদে স্বাস্থ্য বিধি ছাড়াই এলোমেলো ভাবে চাল বিতরণ করা হচ্ছে, অনেকের মুখে মাক্স নেই এবং ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতি ছাড়াই বিতরণ করা হচ্ছে চাল। চাল নিতে আসা উপকারভুগি, আদরি, রাজিয়া মঞ্জিলাসহ অনেকেই বলেন ভিজিডির চাল প্রতিমাসে দেবার কথা থাকলেও সময়মত চালগুলো তাদেরকে দেয়া হয়না। গত ঈদের এক সপ্তাহ আগে চাল পেয়েছেন, এরপর গত বৃহস্পতিবার আবার পেয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং ভুক্তভুগিদের অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, শিবনগর ইউনিয়নে ভিজিডির উপকারভোগী মোট ৪৪০জন, মে ও জুন মাসের ২৬,৪০০ মে.টন চাল দীর্ঘদিন আগে উত্তোলন করা হলেও ওই চাল উপকারভোগিদের মাঝে বিভিন্ন অজুহাতে সময়মত বিতরণ করেননি ইউপি চেয়ারম্যান মো: মামুনুর রশীদ চৌধুরী বিপ্লব । অপরদিকে উপজেলার অন্য ইউনিয়নগুলোতে মে মাসের ভিজিডির চাল ২৫ মে এবং জুন মাসের ভিজিডির চাল ১৪ জুন বিতরণ করা হলেও শুধুমাত্র শিবনগর ইউনিয়নে সময়মত চাল বিতরণ না করায় হতাশ হয়ে পড়েছেন নিম্নআয়ের ভিজিডি চক্রের ৪৪০জন উপকারভোগী। ভিজিডি চক্রের উপকারভোগীরদের মধ্যে অনেকের নাম তালিকায় থাকা সত্বেও তারা এখোনো কার্ড পায়নি,সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের কাছে দিনের পর দিন ধরণা দিয়েও কোন কুল কিনারা না পেয়ে করোনাকালীন এই মহামারীতে কর্মহীন হয়ে পড়া শিবনগর ইউনিয়নের উপকারভুগিরা গরিব অসহায় মানুষ গুলো তাদের কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এজন্য তারা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইউনিয়ন সচিবের সাথে ঝামেলা ও তার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে ভিজিডির দুমাসের চাল বিতরণে দেরী হয়েছে।
ভিজিডি চক্রের উপকারভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন,যারা অভিযোগ করেছে তাদের বাদ দিয়ে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। চাল বিতরণে ট্যাগ অফিসার নিতে হবে এরকম কোন বাধ্যবাধকতা আছে কি না আমার জানা নেই ।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রীতা মন্ডল জানান, শিবনগর ইউপি চেয়ারম্যান তাদের কোন সরকারী নির্দেশনা মানছেননা। ভিজিডির সরকারী চাল উত্তোলনের পর তিনি কোনভাবেই সেগুলো বিতরণ না করে দীর্ঘসময় রাখতে পারেননা। জনপ্রতি ভিজিটি উপকারভোগীদের সঞ্চয়ের টাকা একাউন্টে জমা হবার কথা থাকলেও তিনি (চেয়ারম্যান) তার নিজের কাছে টাকা রেখে দিয়েছেন। এমনকি ভিজিডির উত্তোলনকৃত চাল বিতরণের জন্য ট্যাগ অফিসার নেবার কথা থাকলেও তিনি ট্যাগ অফিসার না নিয়ে ইচ্ছেমত চাল বিতরণ করেন।
জানতে চাইলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ট্যাগ অফিসার) মো: সোহানুর রহমান সুমন জানান, চাল বিতরণের চিঠি এলে তিনি নিজে শিবনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো: মামুনুর রশীদ চৌধুরীর সাথে দেখা করে বার বার চাল উত্তলনের বিষয়ে বললেও তিনি কথা শোনেনা এবং কোনো প্রকার যোগাযোগ রাখেননা। বেশির ভাগ সময় মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। নিজ খেয়াল খুশিমতো চলেন। তিনি বলেন ট্যাগ অফিসার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত চাল বিতরণের সময় তাকে (ট্যাগ অফিসার) কে কিছুই জানাননি। লোক মুখে জানতে পারলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আবগত করি।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন,ভিজিডি চক্রের ২০২১-২০২২ অনলাইন তালিকাভূক্ত উপকারভোগীদের বাদ দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান তাঁর নিজ খেয়াল খুশি মতো চাল বিতরণ করছেন এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভুগিরা। বিষয়টি নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট্র একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।