মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউপি পরিষদের সাধারণ নির্বাচন আগামী ২৯ ডিসেম্বর। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩২ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১১ জন প্রার্থী রয়েছেন। ১১ ডিসেম্বর প্রতীক পেয়ে জোর প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা। প্রার্থীদের ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও লিফলেটে ছেয়ে গেছে পুরো ইউনিয়ন। অনেক প্রার্থী মাইক যোগে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থীদের প্রচারণার মাইক ইউনিয়নের মূল বাজার ফুলতলা বাজারে একাধিক বার চক্কর দিতে থাকে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে প্রার্থীরা ভোট প্রার্থনা করছেন। অতীতে ভুলের ক্ষমা চেয়ে নতুন ভাবে ভোট চাচ্ছেন দ্বারস্থ হচ্ছেন দ্বারে দ্বারে। কে কী করবেন তার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন ভোটারদের।
চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ মাসুক। তিনি ইতোপূর্বে ৫ বারের নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান। এ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক চেয়ে ১১ জন প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের নিকট জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। তবে মাসুক আহমদ মাসুককেই প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয় দলটি। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন- ৫ বার নির্বাচিত হয়ে ২৬ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার ইউনিয়নে কোন চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি নেই। আমার ইউনিয়নের মানুষ বাড়ীর উঠোনে গরু রেখে শান্তিতে ঘুমায়। মানুষ এটাই চাই এবং এ জন্য মানুষ আবার আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।
ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম ফয়াজ আলীর পুত্র আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল আলীম শেলু ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। দ্রুততম সময়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, উপযুক্ত ব্যক্তিকে ভাতার আওতাধীন করা, ব্রীজ, কালভার্ট, রাস্তা নির্মাণ, গ্রাম আদালতে বিচার কার্য দ্রুত নিস্পত্তি করা এবং নাগরিক সেবায় আমূল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি ডিজিটাল ইউনিয়ন বিনির্মাণের লক্ষ্যে ভোটারদের কাছে ভোট চাচ্ছেন এ তরুণ প্রার্থী। পিতার তুমুল জনপ্রিয়তা ও নিজের ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগিয়ে তিনি নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিবেন বলে আশাবাদী।
অপর প্রার্থী সাবেক দুই বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য মোস্তফা মিয়া। জাতীয় পার্টির এই নেতা আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ইতোপূর্বে এক বার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করলেও তেমন সাড়া জাগাতে পারেননি ভোটারদের। তবে এবার তিনি রয়েছেন আলোচনার শীর্ষে। করোনাকালে কর্মহীন হয়ে পড়াদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। সে হিসেবে জয়ের ব্যাপারে তিনি নির্ভার। নিজের পরিবারে স্বচ্ছলতার কারনে পিছু টান না থাকায় নির্বাচিত হয়ে সরকার প্রদত্ত সকল সুবিধা তিনি জনগণের কাছে পেঁছে দিতে চান।
ফুলতলা ইউনিয়নের তথ্য সূত্র বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভোটারের সাথে কথা বলে জানা যায়- চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থীর মধ্যে এখন পর্যন্ত আব্দুল আলীম শেলু ও মোস্তফা মিয়া সমান তালে বেশ এগিয়ে রয়েছেন। সে হিসেবে অনেকটা বেকায়দায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাসুক আহমদ। তিনটি চা বাগান অধ্যুষিত ও আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত এ ইউনিয়নে বিগত ৫ বছর চেয়ারম্যান থাকা কালে মাসুক আহমদ এর কাছে আওয়ামী ঘারাণার লোকজন ছিলেন অবহেলিত। বিএনপি দলীয় দুই মেম্বারের উপর ইউনিয়নের সকল দায়িত্ব দিয়ে রেখেছিলেন। তিনি এলাকায় না থেকে উপজেলা শহরের বাসায় থাকেন। লোকজন তাঁকে পায় না। কোন কাগজে দস্তখতের জন্য সেবা গ্রহীতাকে ৩-৫ শত টাকা খরচ করে জুড়ীতে গিয়ে দস্তখত আনতে হতো। এ রকম বিস্তর অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী পরিবারসহ ইউনিয়নবাসীর। ফুলতলা চা বাগানের মধ্য দিয়ে নিজ স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে চা শ্রমিকদের সাথে তার বিরোধ দীর্ঘদিনের। এরকম নানা কারনে তার জনপ্রিয়তা তলানিতে থাকলেও দিন দিন কিছুটা পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
পিতা মরহুম ফয়াজ আলী চেয়ারম্যানের তুমুল জনপ্রিয়তা আঁকড়ে ধরেছে তাঁর পুত্র আব্দুল আলীম শেলুকে। সাবেক চেয়ারম্যান ফয়াজ আলীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ফুলতলা ইউনিয়নবাসী। নিন্দুকেরাও তাঁর প্রশংসা করেন। জনপ্রিয় পিতার অনুসারীদের অনুরোধে প্রবাস ছেড়ে এসে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন আব্দুল আলীম শেলু। ভোটের রেস-এ তাঁর ঘোড়া বেশ এগিয়ে রয়েছে বলে প্রতীয়মান।
দুই বার ইউপি সদস্য থাকাবস্থায় ওয়ার্ডবাসীকে সেবা দিয়েছেন মোস্তফা মিয়া। সেবার পরিধী ইউনিয়ন পর্যায়ে বিস্তৃত করতে চান তিনি। করোনার দুঃসময়ে কর্মহীন চা শ্রমিকসহ বস্তিবাসীর পাশে তিনি দাড়িয়ে ছিলেন। অর্থ ও খাদ্য সহ বিভিন্ন ভাবে মানুষকে সহযোগিতা দিয়েছেন বলে মানুষের মুখে শোনা যায়। এবং এ কারনে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। আনারস প্রতীকে তিনি শীর্ষে থাকলেও শেষ পর্যন্ত আঞ্চলিকতার অপরাজনীতির শিকারে পিছিয়ে পড়তে পারেন। এ ক্ষেত্রে ঘোড়ার গতি আরো বেড়ে যেতে পারে।
ফুলতলার সাধারণ ভোটারের মধ্যে এক অজানা ভয় কাজ করছে। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনী ফলাফল রদবদলের আশংকা করছেন ভোটারগণ। নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে চায় ভোটাররা। সর্বোপরী ভোটারের মুখে মুখে একটি কথাই ফিরছে ‘টাকা’। জয়-পরাজয়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখে টাকা। টাকার বদৌলতে শেষ পর্যন্ত ত্রিমুখী লড়াইয়ে যে কেহ বাজিমাত করতে পারেন। তার প্রতিফলন ঘটাতে পারে একমাত্র ভোটারগন।