গাজা উপত্যকায় আটক করা অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনির সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ও ভিডিওতে দেখা গেছে, এসব বন্দিদের অন্তর্বাস পরা অবস্থায় চোখ বেঁধে উত্তর গাজার রাস্তায় হাঁটুতে ভর দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এসব ছবি ও ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
তারিখ না থাকা ভিডিও প্রথম প্রকাশ্যে এসেছে বৃহস্পতিবার। এতে দেখা গেছে, বন্দি ফিলিস্তিনিদের মাথা অবনত অবস্থায় রাস্তায় হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে আছেন। তাদের পাহারা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর অনেকেই ইসরায়েলি সেনাদের এমন আচরণের নিন্দা জানাচ্ছেন।
দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক অ্যালান ফিশার বলেছেন, অর্ধনগ্ন ব্যক্তিদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এসব বন্দিদের অনেককে শনাক্ত করেছেন স্থানীয় সমাজ ও পরিবারের সদস্যরা।
ফিশার বলেছেন, কেউ বলছেন, এদের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন, একজন একটি দোকান পরিচালনা করতেন, অপর একজনের ‘সন্ত্রাসবাদের’ সঙ্গে কোনও যোগসূত্র নেই। বেশ কয়েকজন বন্দিদের মধ্যে স্থানীয় একজন পরিচিত সাংবাদিককে শনাক্ত করেছেন। যখন সারিবদ্ধ বসিয়ে রাখা হয়েছিল তখন এক ব্যক্তির সঙ্গে তার দুই সন্তানও ছিল।
আল-হক নামের মানবাধিকার সংস্থার পরিচালক শাওয়ান জাবারিন বলেছেন, ছবিগুলো দেখে তিনি বিমূঢ় হয়ে পড়েছেন। এগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বন্দি ও আটকদের সঙ্গে আচরণের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এটি অমানবিক। এটি নির্যাতনের চেয়ে বেশি কিছু। এটি একটি যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, ছবিতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন হামাস যোদ্ধা রয়েছেন, যারা ইসরায়েলি সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
শুক্রবার বিকেলে তেল আবিব থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক ইমরান খান বলেছেন, ছবিতে থাকা কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
পরিবারের সদস্যদের মতে, মুক্তি পাওয়া এক বন্দি ছিলেন একজন দোকানদার, হামাসের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই।
বন্দিদের প্রতি এমন আচরণের ছবি সম্পর্কে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রকাশিত বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশমূলক কোনও বক্তব্য ছিল না। তারা এই কৌশল ব্যবহার করে যাবে। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় বা মানবাধিকার সংগঠনের নিন্দার পরোয়া তারা করে না।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি এর আগে বলেছিলেন, লড়াইয়ের সময় যারা এলাকায় থাকবে, সুড়ঙ্গ থেকে বের হয়ে আসবে, বাড়ি থেকে বের হয়ে আসবে, তাদের সঙ্গে হামাসের যোগাযোগ থাকুক বা না থাকুক, সবাইকে বন্দি করা হবে, সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম