হুজুররা ফতোয়া দিয়েছেন ভাস্কর্য রাখা বেদাত। ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত আলেমদের ফতুয়া এখন দেশের শীর্ষ আলোচনায় পরিণত হয়েছে। এই বেদাত শব্দটি নিয়ে হুজুরদের মধ্যেও মতানৈক্য শুরু হয়েছে। সাধারণ মানুষ এখন বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে কোনটা সঠিক হিসাবে গ্রহণ করবে! গুরুত্বপূর্ণএই হাদিসটি কেন জাতিকে আগে জানান হয়নি? দেশে ভাস্কর্য আছে বহু এবং তা বৃটিশ আমল থেকেই প্রদর্শীত হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণস্থানে। পাকিস্তান আমলেও নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্য। অনেক বাড়িতেও বাঘ, সিংহ সহ মানুষের ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে যত্ন করে। বাড়ির দেয়ালেও ভাস্কর্যের শোভা অংকিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন করা হয়েছে প্রায় সব জেলাতেই। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। ৫০ বছর পর বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে এত হুমকি ধামকি শুরু হল কেন? হাদিস কোরআনের নির্দেশ কোন কিছুই নতুন নয়। তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ হাদিসটি নিয়ে আগে কেউ মুখ খুলেনি কেন? ধর্মীয় বিধান সরকারকে জানালেই ত বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যেত। ইসলামের কোন আইনটি বর্তমান সরকার মান্য করেনি? তাহলে সরকার উৎখাত করার হুমকি দিতে হবে কেন? ভাস্কর্য নিয়ে কি তাহলে আবার রাজনীতি করছেন শিক্ষিত হুজুররা? এমন ভাস্কর্য শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর সব মুসলিম দেশেই রয়েছে। পাকিস্তান, ইরান, তুরষ্ক, ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়াতেও রয়েছে। বাংলাদেশের হুজুররা ঐ সব মুসলিম দেশের জন্য কি ফতোয়া দিবেন?
দেশ যখন ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলেছে। অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জীত হয়েছে। অনেক দেশকে পেছনে ফেলে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। তখন ধর্মানুভূতি দেখিয়ে সাধারণ জনগোষ্ঠির মধ্যে উগ্র মনোভাব ছড়ানো কি সঠিক হচ্ছে? জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের মীমাংসিত সত্য। এই বিতর্কটি শুরু হয়েছে ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর। ইতিহাস বিকৃত করে নকল নেতা বানানোর অপচেষ্টা চলেছে অবিরাম। বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। নতুন করে মীমাংসিত ইতিহাসকে বিকৃত করার জন্যই এই রাজনীতিতে শুরু করেছে পরিকল্পিতভাবে। দেশের জনগণই স্বাধীনতার ইতিহাস রক্ষা করবে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য দেশে আছে এবং থাকবে।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
টরন্টো, কানাডা
৪ ডিসেম্বর ২০২০।